বিরল অসুখের চিকিৎসায় বিপুল ব্যয়, খরচ তুলতে নয়া উদ্যোগ শহরে
এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রতি হাজার জনসংখ্যায় যে অসুখ ১ জনেরও কম হয়, তাকে রেয়ার ডিজ়িজ় বা বিরল অসুখ বলে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা (হু)। এর সংখ্যা প্রায় ৭০০ রকম। এর মধ্যে অধিকাংশেরই চিকিৎসা নেই এখনও। তবে চিকিৎসা রয়েছে, এমন রোগগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় যে ১৩-১৪টি বিরল অসুখ, ছ’টি বাদে সেগুলির একটিরও ওষুধ দেশে তৈরি হয় না।ফলে বিপুল খরচ বিরল রোগ বা রেয়ার ডিজ়িজ়ের চিকিৎসায়। এবং হাতেগোনা হাসপাতালেই হয় এর চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়। এমনই একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হলো পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ)। চিকিৎসার বিপুল খরচের কিছুটা জোগাড় করে যাতে পাশে দাঁড়ানো যায় রোগী-পরিজনের, গড়ে তোলা যায় সচেতনতা, সেই লক্ষ্যে আজ, বুধবার সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ওই প্রতিষ্ঠান। গড়িয়াহাটের কাছে ‘চিলড্রেন্স লিটল থিয়েটার অবন মহল’-এ হবে অনুষ্ঠান।আইসিএইচের চেয়ারম্যান তথা এক্সিটিউভ ডিরেক্টর অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, ওই অনুষ্ঠানে রূপঙ্কর বাগচী বিনা পারিশ্রমিকে সঙ্গীত পরিবেশন করতে রাজি হয়েছেন বলে তাঁরা কৃতজ্ঞ। তবে শুধু বিখ্যাত শিল্পীর গানই নয়, তাঁদের পরিচালনায় ‘নিবেদিতা’ নামে স্পেশ্যাল চাইল্ডদের যে স্কুল রয়েছে, সেখানকার পড়ুয়ারাও পারফর্ম করবে নানা শিল্পকলার মাধ্যমে।ওই সব পড়ুয়াদের কেউ ভোগে ডাউন্স সিনড্রোমে, তো কেউ অটিজ়মে, তো কেউ আবার ডেভেলপমেন্টাল ডিলে কিংবা ডিসলেক্সিয়ায়। অনুষ্ঠানে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে স্পাইনাল অ্যাট্রফি, ডুসেন মাসকিউলার ডিসট্রফি, হান্টার সিনড্রোম, গোসে’জ় ডিজ়িজ়, উইলসন্স ডিজ়িজ়ের মতো বিরল অসুখ নিয়ে।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ১ জনেরও কম বিরল অসুখের শিকার হলেও, ভারতের বিপুল জনসংখ্যার কারণে বাস্তবে রোগীর সংখ্যাটা অনেক। প্রায় ১০ কোটি ভারতীয় শিশু ৭০০ রকম বিরল অসুখে ভোগে। ফলে রেয়ার ডিজ়িজ়ের বিশ্বজোড়া মানচিত্রে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়, নাইজেরিয়ার ঠিক পরেই।অথচ মাত্র ৩০-৩৫টি বিরল রোগেরই চিকিৎসা রয়েছে বিজ্ঞানে। কিন্তু সেগুলোর ক্ষেত্রেও ওষুধের দামের কারণে বাস্তবে অধরা থেকে যায় চিকিৎসা। তাদেরই একাংশের পাশে দাঁড়াতে চায় আইসিএইচ। অপূর্ববাবু বলেন, ‘বিরল অসুখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে অধিকাংশের রোগটাই ধরা পড়ে না। এর টেস্টও খুব ব্যয়বহুল। অনেকের আবার রোগ চিহ্নিত হলেও মহার্ঘ ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই বলে চিকিৎসাটাই হয় না। এগুলো নিয়ে সচেতনতা দরকার।’তিনি জানান, গত বছর থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সহযোগিতায় ভারতীয় কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা বিরল রোগের কয়েকটি ‘পেটেন্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ’ ওষুধ দেশেই তৈরি করছে এখন। ফলে সেই সব ওষুধের খরচ কমেছে ব্যাপক হারে। কিন্তু স্পাইনাল অ্যাট্রফি, ডুসেন মাসকিউলার ডিসট্রফির চিকিৎসা এখনও সাধ্যের বাইরে।এমনই সব অসুখে ভোগা শিশু-কিশোর-কিশোরীদের চিকিৎসা হয় আইসিএইচে। কখনও বা আজকের মতো কোনও অনুষ্ঠান করে, কখনও বা কোনও স্পনসর ধরে, আবার কখনও ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করানো হয় এই প্রতিষ্ঠানে। কিছু অসুখের ক্ষেত্রে বিদেশি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কারও কারও চিকিৎসা করানো হয়।একই পদ্ধতি অনুসরণ করে চিকিৎসা চালানো হয় আইসিএইচের অধীন ‘মৃণালিনী সেন্টার ফর ক্যান্সার রিসার্চ’-এ চিকিৎসাধীন অনেক ক্যান্সার আক্রান্তের। আজকের অনুষ্ঠান থেকে ছড়ানো সচেতনতা ও সংগৃহীত অর্থ আগামী দিনে কাজে লাগবে, এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা বলে জানাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা।