সাত বছর আগে, ২০১৭-র ১ জুলাই দেশজুড়ে সব ক্ষেত্রে চালু হয়েছিল গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি)। তখনও চিকিৎসকরা মৃদু প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ওষুধপত্র ও চিকিৎসা নিয়ে। কিন্তু এখন প্রতিবাদ জোরালো করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন নেওয়া হবে জিএসটি, এর অর্থ কি মানুষের অসুস্থতার উপরেই কর চাপিয়ে দেওয়া নয়, একটি কল্যাণকারী রাষ্ট্র কী করে এমনটা করতে পারে?আসন্ন সরকারের কাছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জিএসটি তুলে নেওয়ার প্রত্যাশা ও দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যকে এবার এই মর্মেই চিঠি দিলো দেশে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)।অবশ্য শুধু জিএসটি নিয়েই নয়। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের নানা বিষয় এবং চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের নানা দাবি নিয়েও সরব হয়েছে আইএমএ। সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি আরভি অশোকান ও মহাসচিব অনিলকুমার জে নায়েক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন অসুস্থ ব্যক্তির শয্যার ভাড়া বা বেড চার্জের উপর জিএসটি বসিয়ে সরকার তার দৈন্যই জাহির করে ফেলেছে।এই কর তুলে নেওয়া হোক। শুধু এটাই নয়, ভেন্টিলেটর, মনিটর, অ্যানাস্থেশিয়ার যন্ত্রপাতির মতো জীবনদায়ী উপকরণে ১২ শতাংশ এবং জীবনদায়ী নানা যন্ত্রের ব্যাটারির উপর ২৮ শতাংশ জিএসটি বারংবার অনুরোধের পরেও কী ভাবে বহাল রাখছে কেন্দ্র, সে প্রশ্নও তোলা হয়।চিঠিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে লাগু একের পর এক জিএসটি-র প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে। আইএমএ বিস্মিত, এক্স-রে ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র এবং গ্লুকোমিটারের ব্লাডসুগার টেস্টের স্ট্রিপের উপরই বা কী ভাবে এখনও ১৮ শতাংশ জিএসটি বহাল! তাঁদের প্রশ্ন, যে ভাবে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি মেরামতির খরচের উপর ১৮-২৮ শতাংশ জিএসটি চাপানো হয়, আখেরে কি তা চিকিৎসার খরচই বাড়িয়ে দেয় না আমজনতার?ওষুধপত্র, অক্সিজেন ও একবার ব্যবহারযোগ্য ডাক্তারি অনুষঙ্গের উপরেও যে ভাবে ১২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যবিমা কিনতে গেলে যে ভাবে ১৮ শতাংশ জিএসটি-র ব্যয়ভার সাধারণ মানুষকে বইতে হয়, সে সব প্রসঙ্গেও রাষ্ট্রের কল্যাণকারী ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএ। অন্য একাধিক প্রসঙ্গও উত্থাপন করা হয়েছে চিঠিতে। অশোকান জানান, তাঁরা গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করছেন, আয়ুর্বেদ-সহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা শাখাকে নানা ভাবে অ্যালোপ্যাথি বা মডার্ন মেডিসিনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যে হিংসার ঘটনা ঘটছে, সেগুলো দমনে অত্যন্ত কড়া কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নেরও দাবি তোলা হয়েছে। চিকিৎসকদের ক্রেতাসুরক্ষা আইনের আওতা থেকে বের করারও আবেদন জানানো হয়েছে। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার পর যে ন্যাশনাল এগজ়িট এগজ়াম (নেক্সট) নামে অভিন্ন সর্বভারতীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে, সেটিও প্রত্যাহারের আর্জি জানানো হয়।