ঝুঁকেগা নেহি? তবে কোথায় পুষ্পা? ৮টা গুলি লেগেছিল গায়ে। রক্তমাখা জামাটা পড়ে ছিল জঙ্গলে। তার পর? রক্তচন্দনের চোরাকারবারি, এলাকার রবিনহুড কি পুলিশের গুলিতেই খতম?গোটা দেশ কাঁপানো ব্লকবাস্টার দক্ষিণী ছবির পার্ট ২-এর ট্রেলারই বলে দিয়েছে, উত্তরটা অবশ্যই না। বরং সবার উত্তেজনা বাড়িয়ে বন দপ্তরের বসানো নাইট ভিশন সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরার সাদা-কালো রেকর্ডিংয়ে দেখা গিয়েছে, রাতের অন্ধকারে বাঘের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন অল্লু অর্জুন ওরফে পুষ্পা।চাদরের আড়ালে সেই খতরনাক লুক, আর ‘ঝুঁকেগা নেহি’ অ্যাটিটিউড। তাকে দেখে দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছে বনের রাজাও। ক্যামেরার সেই ক্লিপিং মিডিয়ায় টেলিকাস্ট হতেই হাততালি, সিটিতে মুখরিত গঞ্জ-শহর। তেলঙ্গানার গভীর জঙ্গলেও হয়তো রিলের পুষ্পার মতোই কনফিডেন্স নিয়ে হাঁটা শুরু করেছিল ওরা চার জন। কিন্তু রিল আর রিয়েল সব সময়ে এক নয়।তাই শেষরক্ষাও হলো না। নাল্লামালা জঙ্গলে আমরাবাদ টাইগার রিজার্ভের ভিতরে নীলগাই মেরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বন দপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি উঠে গেল সবার। আর সেই ক্যামেরা রেকর্ডিংয়ের সূত্র ধরেই বন দপ্তরের জালে ধরা পড়ে গেল তিন চোরাশিকারি! ঘটনাচক্রে, তাদের মধ্যে দু’জন আবার বন দপ্তরেরই ঠিকাকর্মী।তেলঙ্গানা বন দপ্তর সূত্রে খবর, টাইগার রিজার্ভে রুটিন মনিটরিংয়ের জন্য চতুর্থ ফেজ়ে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছিল আমরাবাদ জঙ্গলের পান্ডিগুনাম রেঞ্জে। গত ২ ফেব্রুয়ারি বসানো ওই ট্র্যাপ ক্যামেরাই কাল হলো চোরাশিকারিদের। সপ্তাহ তিনেক পরে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যখন ট্র্যাপ ক্যামেরা খুলে তার রেকর্ডিং চেক করছিলেন বনকর্মীরা, তখনই দেখা যায়, নীলগাই মেরে তা কাঁধে চাপিয়ে বাঘের জঙ্গল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুই চোরাশিকারি।কোনও ভয়ডর নেই, লুকিয়ে চলারও কোনও চেষ্টা নেই। বরং ‘ট্রফি হান্টিং’ সেরে মেজাজেই বনপথে হাঁটছে তারা। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তল্লাশি। ট্র্যাপ ক্যামেরায় সরাসরি মুখের ছবি চলে আসায় টাইগার রিজার্ভের ভিতরেই, প্রত্যন্ত গ্রাম মাড্ডিমাডুগু থেকে ধরা পড়ে দাসারি লালু আর দাসারি শ্রীনু, তাদের জেরা করে ধরা হয় জেলি কৃষ্ণা নামে আরও এক চোরাশিকারিকে। তবে আরও একজন পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালায়।জানা যাচ্ছে, লালু আর শ্রীনু বন দপ্তরেরই ঠিকাকর্মী। একজন জঙ্গল সাফাই করত, আরেকজন ছিল অ্যানিম্যাল ট্র্যাকার। শুধু নীলগাই মেরেই এরা ক্ষান্ত, নাকি বাঘ-হাতি-দামি কাঠের চোরাশিকারের সঙ্গেও সবাই যুক্ত, হেফাজতে নিয়ে জানার চেষ্টা চালাচ্ছে তেলঙ্গানা পুলিশ।পর্দার পুষ্পা ফিরবে এ বছরই, ১৫ অগস্ট। কিন্তু জঙ্গলে বাস্তবের পুষ্পাদের সঙ্গে বনকর্মীদের কানামাছি খেলা যেন দৈনিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর চোরাশিকারিদের হাতে শুধু যে পশুপাখি মারা যাচ্ছে, এমনও নয়। চলতি ফেব্রুয়ারিতেই তেলঙ্গানার মহাদেবপুর জঙ্গলে সার্চ অপারেশন চালানোর সময়ে সেখানে পেতে রাখা বিদ্যুৎবাহী তারে তড়িদাহত হয়ে মারা যান এ নবীন নামে রাজ্যের এক গ্রেহাউন্ড জুনিয়র কম্যান্ডো।পুলিশকর্তারা তখনই জানিয়েছিলেন, ওই তার মাওবাদীদের পাতা নয়, খুব সম্ভবত চোরাশিকারিরা বন্য জন্তু মারতে ‘লাইভ ওয়্যার’ বিছিয়ে রেখেছিল। বছর চৌত্রিশের নবীনের পা জড়িয়ে যায় সেই তারে। তেলঙ্গানা তাই চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের সব জঙ্গলে এআই বেসড রিয়েল টাইম মনিটরিং সিস্টেম চালু করতে, যাতে চোরাশিকার হোক বা কোনও দুর্ঘটনা — সহজেই তথ্য পাওয়া যায়। মধ্যপ্রদেশে সেই নজরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে, পড়শি তামিলনাডুও হাঁটছে একই পথে।কারণ রণথম্ভোর থেকে মেলঘাট, বানেরঘাটা থেকে বান্দিপুর — গত ৭-১০ বছর ধরে ক্যামেরা ট্র্যাপে চোরাশিকারিদের ছবি উঠলেও যেহেতু তার রিয়েল টাইম ডেটা কালেকশন হয় না, তাই অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা পুলিশের নাগাল এড়িয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তবে কিছু গ্রেপ্তারিও হয়েছে। যেমন ওডিশার সিমলিপাল জঙ্গলে রিমোট ইনফ্রারেড ক্যামেরার সাহায্যে ২৪X৭ নজরদারি চালিয়ে সদ্যই জালে তোলা হয়েছে এক কুখ্যাত চোরাশিকারিকে।তেলঙ্গানার প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) মোহনচন্দ্র পরগায়েন বলছেন, ‘চোরাশিকার রুখতে আমারই ভাবনা থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে একটা প্রজেক্ট শুরু হয়। ক্যাচ দ্য ট্র্যাপ। তাতে যথেষ্ট সাফল্য মিলেছে। এবার এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মনিটরিং বাড়ানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে।’রিলের পুষ্পা বলতেই পারেন, ঝুঁকেগা নেহি। দর্শকরা সিটি মারবে। রিয়েল পুষ্পারা না ঝুঁকলে তো শুধু রক্তচন্দন নয়, পরের পর বাঘ-সিংহ-হাতিও নিকেশ হতে থাকবে। ঠিক যেমন দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সদ্য সম্প্রচারিত একটি ওয়েব সিরিজে। তখনও সিটি মারবেন?