• Cancer Treatment : ক্যান্সার জয় করার পরেও ফের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে ফুড সাপ্লিমেন্ট
    এই সময় | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • মারণ ক্যান্সারের চিকিৎসায় অভিনব অগ্রগতির হদিশ মিললো ইঁদুরের উপর গবেষণায়। আশা, আগামী দিনে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় সুস্থতার রাস্তা চওড়া করবে অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে। হয়তো প্রতি ট্যাবলেট মিলবে মাত্র ১০০ টাকা দামে।মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করছেন, যেটা ক্যান্সার সেরে যাওয়ার পরে ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমায়। ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়া ঠেকায় এবং কেমো ও রেডিয়েশন থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েও ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মানুষের উপর না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত মন্তব্য করতে নারাজ।কেননা, এটি ক্যান্সার চিকিৎসার কোনও প্রথাগত ওষুধ বা ড্রাগ নয়। আদতে এটি লাল আঙুরের নির্যাস থেকে সংগৃহীত ‘রেজ়ভারেট্রল’ নামে একটি ফুড সাপ্লিমেন্ট ও তামার মিশ্রণ। যদিও তা ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা নয়, সহায়ক একটি চিকিৎসা। কী ভাবে এই সাপ্লিমেন্ট ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিকে বাগে আনে? টাটা মেমোরিয়ালের ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাড়ওয়ে জানিয়েছেন, ক্যান্সার ফিরে আসা এবং ছড়িয়ে পড়ার জন্য যে রাসায়নিকটি দায়ী, প্রথমে সেটি আবিষ্কার করা এবং তার পর তাকে ধ্বংস করার রাসায়নিকটি চিহ্নিত করাই তাঁদের মূল কাজ।গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রাজেন্দ্র বলেন, ‘গত এক দশক ধরে এই কাজ করে আমরা দেখেছি, রেজ়ভারেট্রল ও তামার মিশ্রণ ক্যান্সারের রেকারেন্স (ফের আক্রান্ত হওয়া) ৩০% পর্যন্ত এবং মেটাস্ট্যাসিস (এক অঙ্গ থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া) ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম।’ কী ভাবে? তাঁর ব্যাখ্যা— ‘ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে তাঁরা দেখেছেন, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ থেকে ক্রোমাটিন পার্টিকল বের হয়। সেটাই সুস্থ কোষকে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে বদলে দেয়। আর রেজ়ভারেট্রল ও তামার মিশ্রণ এই ক্রোমাটিন পার্টিকলকেই নিকেষ করে।’গবেষকরা জানাচ্ছেন, রেজ়ভারেট্রল ও তামার মিশ্রণটি আদতে এক ধরনের প্রো-অক্সিডেন্ট ট্যাবলেট। সেটা ওরালি খেয়ে নিলে পাকস্থলি থেকেই তা দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং সেই মিশ্রণ থেকে নির্গত অক্সিজেন ফ্রি র‍্যাডিক্যাল শরীরে জমা হওয়া ক্রোমাটিন পার্টিকলগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। এতেই ক্যান্সার ফিরে আসা ও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে। এবং ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা যে কেমোথেরাপি ও রেডিয়োথেরাপি, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই মিশ্রণ।বাড়ওয়ে জানিয়েছেন, সাপ্লিমেন্ট মিশ্রণের ট্যাবলেটটি যেহেতু কোনও ওষুধ বা ড্রাগ নয়, তাই কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যার্ন্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)-এর বদলে কেন্দ্রীয় খাদ্যসুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)-এর কাছে আবেদন করা হয়েছে অনুমোদনের জন্য। তাঁর ধারণা, ছাড়পত্র মেলার পর চলতি বছরের মাঝামাঝি প্রতি ট্যাবলেটের ১০০ টাকা দাম ধার্য করে তা বাজারজাত করা সম্ভব ।তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, ওষুধটির সুরক্ষার দিকটি ইঁদুর ও মানুষের উপর যাচাই করা হলেও কার্যকারিতার দিকটি আপাতত শুধু ইঁদুরের উপর পরখ করে দেখা হয়েছে। মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে তা পরখ করতে এখনও বছর পাঁচেক সময় লাগবে। বিশেষজ্ঞ মহল অবশ্য এখনই এই দাবিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটা কোনও জার্নালে গবেষণাপত্র হিসেবে বেরোক। তার পর বৈজ্ঞানিক আলোচনা করা যাবে।’টাটা মেমোরিয়ালেরই প্রাক্তন ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় রেকারেন্স ও মেটাস্ট্যাসিস ঠেকানো নিয়ে সারা দুনিয়ায় গবেষণা চলছে। তাই এই গবেষণাটি তাৎপর্যপূর্ণ, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ট্যাবলেটের কার্যকারিতা মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত না হওয়া ইস্তক, এ নিয়ে আলোচনা করা বৃথা।’ একই সুর হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীর গলায়।তাঁর কথায়, ‘রেজ়ভারেট্রলের গুণাগুণ নতুন নয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে। কিন্তু মেটাস্ট্যাসিস ও রেকারেন্স ঠেকানোর বিষয়টি হিউম্যান ট্রায়ালের আগে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটা যেহেতু একটি ফুড সাপ্লিমেন্ট, তাই ক্ষতিকারক কিছু হবে না। কিছু মানুষেরও যদি এ থেকে উপকার হয়, তা হলেও এটিকে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলবো।’
  • Link to this news (এই সময়)