• Lok Sabha Election : সাফল্যের গ্রাফেও স্বস্তি নেই, তাই কি ঘর ভাঙানোর খেলা
    এই সময় | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • সেমিফাইনালে জয় এসেছে গত ডিসেম্বরেই। সামনে ফাইনালে জয়ের টার্গেটও জোরালোভাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন ক্যাপ্টেন নিজেই—অব কি বার চারশো পার! গত দু’বছরে একের পর এক চমক দিয়ে চলেছে দল। কিন্তু তারপরেও একের পর এক রাজ্যে কেন ঘর ভাঙানোর খেলা?রাজ্যসভার ভোটাভুটিতে ক্রসভোটিংয়ের পরে যেভাবে মঙ্গলবার হিমাচলপ্রদেশে সুখবিন্দর সিং সুখুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে বিজেপি ফেলে দিতে চাইছে বলে গুঞ্জন জোরালো হয়েছে, তাতে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। গত ডিসেম্বরে রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মধ্যপ্রদেশের মতো তিনটি বড় রাজ্য যেভাবে প্রশ্নাতীত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছে বিজেপি, তারপরে বিজেপির বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃত্বের মধ্যে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়েছে যে এবারের লোকসভা ভোটেও নরেন্দ্র মোদী যথেষ্ট বড় মার্জিন নিয়েই আবার কেন্দ্রে সরকার গড়বেন।নমো নিজেও সংসদের ভিতরে ও বাইরে একাধিকবার বলে দিয়েছেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপি একাই ৩৭০-এর বেশি সিট পাবে, এনডিএ পাবে ৪০০-এর বেশি। বিশেষ করে গত মাসেই অযোধ্যায় রামমন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে হিন্দুত্বের ধ্বজা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে যেভাবে বিজেপি গোটা দেশে প্রচারে নেমেছে, তাতে লোকসভা ভোটে গোবলয়ে গেরুয়া শিবির বড় ঝড় তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।এর পাশাপাশি মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ, জি-২০ সামিটের সফল রূপায়ণ, চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের মতো মোদী সরকারের তূণে অনেক তিরই রয়েছে। কিন্তু বিহারের পর বিজেপি হিমাচল দখলে ঝাঁপানোর পরে জল্পনা তীব্র হয়েছে। বুধবার দিনভর জল্পনার মধ্যে সুখু জানিয়েছেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না। হিমাচল সরকারকে আগলে রাখতে জয়রাম রমেশ ও ডিকে শিবকুমারকে সে রাজ্যে পাঠিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তারপরেও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপি এত সহজে হাল ছাড়বে না।রাজ্যসভায় তৃণমূলের হুইপ সুখেন্দুশেখর রায়ের যুক্তি, ‘বিজেপি আসলে চাইছে, ১৯৬৭ সালের আগে দেশে যেমন কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল, সেই ধরনের আধিপত্য বিস্তার করে নিজেদের একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করতে৷ এই উদ্দেশ্য পূরণে তারা সব ধরণের অস্ত্র প্রয়োগ করছে বহু দিন থেকেই৷ হর্স ট্রেডিং, রিসর্ট পলিটিক্স, হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং শব্দগুলি এখন সুপরিচিত৷’ তাঁর সংযোজন, ‘এটা বোঝার পরে কংগ্রেসের আগেভাগেই সাবধান হওয়া উচিত ছিল৷ বীরভদ্র সিংয়ের স্ত্রী প্রতিভা সিং ও ছেলে বিক্রমাদিত্যর মনে জমে থাকা অসন্তোষ যে হিমাচলে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে, তা বুঝতে পারেনি কংগ্রেস, এটা অবশ্যই তাদের বড় ব্যর্থতা৷’নীতীশ ‘ইন্ডিয়া’ ছাড়লেও যেভাবে দেশের অনেকগুলি রাজ্যেই কংগ্রেস শরিকদের সঙ্গে সিট শেয়ারিংয়ের বিষয়টি গত এক-দেড় সপ্তাহে মিটিয়ে ফেলেছে, তাতে বিরোধী শিবিরকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না মোদী-শাহরা, এমনটা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, ২০১৮-তে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, রাজস্থান তিন রাজ্যে বিজেপি পরাস্ত হলেও এবারের লোকসভার মতো এতটা আগ্রাসী ভূমিকায় ছিল না। এবার লোকসভা ভোটে কংগ্রেস বা বিরোধী শিবির যাতে কোনওভাবেই দাগ কাটতে না-পারে, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে তারা।তাই মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি-র মধ্যে ভাঙন ধরানোর পাশাপাশি ঘুরপথে বিহার, হিমাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিও দখল করতে চাইছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, শুধু লোকসভায় বিপুল জয় নয়, রাজ্যসভাতেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইছে গেরুয়া শিবির, যাতে তৃতীয়বার মোদী সরকার গঠিত হওয়ার পরে সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীরা কোনওভাবেই কোনও বিল আটকে দিতে না-পারে। সেজন্য হিমাচলপ্রদেশেও থাবা বসাতে চাইছে বিজেপি। যদিও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এদিন বলেছেন, ‘আমরা অপারেশন লোটাস দেখছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ আমাদের দল এই নোংরা রাজনীতির কাছে মাথা নত করবে না৷’বিজেপির এই কৌশল নিয়ে গেরুয়া শিবিরের মধ্যেও অবশ্য দ্বিমত আছে। দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশের যুক্তি, লোকসভা ভোটের আগে হিমাচলের ঘটনা অনভিপ্রেত। কারণ, এতে বিরোধীদের হাতেই অস্ত্র আসবে। তারা আরও জোর দিয়ে বলতে পারবে, গণতন্ত্রে বিজেপির কোনও বিশ্বাস নেই। আবার দলের এক সর্বভারতীয় নেতার ব্যাখ্যা, ‘এভরি থিং ইজ় ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার। বাংলাতেও তো শাসক দল একটা পঞ্চায়েত পর্যন্ত বিরোধীরা জিতলে দখল করে নিতে চায়। তখন তো বিরোধীরা কিছু বলে না। তাহলে এখানেই বা বলার কী আছে?’বিজেপির তাত্বিক নেতা স্বপন দাশগুপ্তর বক্তব্য, ‘অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রার্থী করা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। তার সুযোগ হিমাচলপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্ব নিয়েছেন। এটা একেবারেই স্থানীয় বিষয়। এর সঙ্গে জাতীয় স্তরের বিজেপির ভাবনা-চিন্তার কোনও সম্পর্ক নেই।’ আবার বাংলায় বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের যুক্তি, ‘আমরা সংকীর্তনের দল খুলে বসিনি। রাজনৈতিক দল খুলেছি। দল ভাঙানোর বিষয়টি কংগ্রেসের থেকে ভালো কেউ পারে না। আমরা কাউকে ভাঙাইনি। শুধু বলেছি, কাছে এস। কাছে এসে বসো।’
  • Link to this news (এই সময়)