One Nation One Election: লোকসভা টু পঞ্চায়েত, সব ভোট কি একসঙ্গেই
এই সময় | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
দেশে বিভিন্ন সময়ে লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের মেয়াদ কি আর বেশিদিন নয়? আইন কমিশন ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ নিয়ে যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করতে চলেছে, তাতে ইঙ্গিত তেমনই। সংবাদসংস্থা পিটিআই বুধবার একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে, শুধু লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনই নয়, এমনকী পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনও যাতে একসঙ্গে করানো যায়, তেমনই সুপারিশ করতে চলেছে প্রাক্তন বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থীর নেতৃত্বাধীন ল’কমিশন।সে জন্য সংবিধান সংশোধন করে যোগ করা হবে একটি চ্যাপ্টার বা কিছু অনুচ্ছেদ, যাতে এই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে। পিটিআই সূত্রে দাবি, ওই অনুচ্ছেদ বা চ্যাপ্টারের ওভাররাইডিং পাওয়ার থাকবে। অর্থাৎ সংবিধানের অন্যত্র যেখানে নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাখ্যা রয়েছে, সেগুলোর তখন আর কোনও গুরুত্ব থাকবে না। প্রশ্ন হলো, কী ভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হবে? আর বিধানসভা ও সরকারগুলির সে ক্ষেত্রে কী হবে?কমিশন সূত্রে পিটিআই-এর প্রতিবেদন বলছে, আগামী পাঁচ বছরে যতগুলি বিধানসভা নির্বাচন হবে সবগুলিরই মেয়াদ ঠিক করা হবে ২০২৯-এর এপ্রিল-মে মাসের কথা মাথায় রেখে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬-এর এপ্রিল-মে মাসে হওয়ার কথা। সেই অঙ্ক কষে ২০২৬-এ বাংলায় বিধানসভা ভোট হবে তিন বছরের জন্য। এই তালিকায় পড়বে অসম, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং পুদুচেরি। ওই চার রাজ্যেও ভোট ২০২৬-এ হওয়ার কথা।২০২৭-এ পাঞ্জাব, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ ও গোয়াতে নির্বাচন। ফলে ওই রাজ্যগুলিতে পরের ভোটে বিধানসভার মেয়াদ হবে দু বছরের! অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা-সহ কয়েকটি রাজ্যে লোকসভার সঙ্গেই সাধারণত বিধানসভা ভোট হয়ে থাকে। কাজেই সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। এর পাশাপাশি, যে সব বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে ৩-৬ মাস পর্যন্ত বাকি থাকবে, সেগুলো আগেই ভেঙে দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর!তবে, বারবারই যে প্রশ্ন ওঠে তা হলো — যদি কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সরকার পড়ে গেল বা ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হলো, সেক্ষেত্রে কী হবে? এই নিয়েও আইন কমিশন বিশেষভাবে সুপারিশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকার তৈরি বা ‘Unity Government’-এর সুপারিশ করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এক জায়গায় নিয়ে এসে মঞ্চ তৈরি করে যাতে সরকার তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থা করার কথা বলা হবে। কিন্তু সেই ধরনের সরকার তৈরি যদি বাস্তবে সম্ভব না হয় তবে কী হবে?সে ক্ষেত্রে বাকি সময়ের জন্য আবার নতুন করে ভোট করা যেতে পারে। সূত্রের খবর, এই যে নতুন করে ভোট হবে সেটা কেবলমাত্র ওই বাকি সময়ের জন্যই করা হবে। মানে ধরা যাক তিন বছর তখনও মেয়াদ শেষ হতে বাকি রয়েছে। তার আগেই ভেঙে গেল সরকার। সে ক্ষেত্রে ওই বাকি তিন বছরের জন্যই আলাদা করে নির্বাচন হবে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ছ’মাস বাকি থাকলে তখন ভোট না নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে। পরে গোটা দেশের সঙ্গে এক সঙ্গে ভোট নেওয়া হবে।প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিলে তখন কী হবে? কারণ, কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সংস্থান সংবিধানে নেই। কমিশনের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে জাতীয় সরকার গঠনই সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান। কমিশনের বক্তব্য, ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনই ভোটার তালিকা তৈরি করবে, সেই তালিকা মেনে পঞ্চায়েত, পুরসভাতেও ভোট হবে। পঞ্চায়েতে এখন তিন স্তরের জন্য তিনটি ভোট দিয়ে থাকেন মানুষ।‘এক দেশ এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালু হলে গ্রামের ভোটারদের তখন লোকসভা বিধানসভা মিলিয়ে বুথে গিয়ে মোট পাঁচটি ভোট দিতে হবে। অন্যদিকে, শহরের বাসিন্দাদের পুরসভা মিলিয়ে ভোট দিতে হবে তিনটি। কী ভাবে ভোট গ্রহণের এই বিপুল ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে সে প্রসঙ্গে কমিশন এখনও কিছু বলেনি। মনে করা হচ্ছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি এই বিষয়ে সুপারিশ করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনই সম্ভবত শেষবারের মতো পৃথক নির্বাচন হতে চলেছে দেশে যদি ক্ষমতায় থেকে যায় বিজেপি সরকার।