• Hate Speech In India : ভারতে হেটস্পিচের ভিক্টিম সংখ্যালঘুরা, দাবি সমীক্ষা রিপোর্টে
    এই সময় | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • দ্বেষের খবর খুব একটা ভালো নয়!গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালেই ৬৬৮টি হেট স্পিচের ঘটনা দেশে ঘটেছে বলে দাবি করল একটি সমীক্ষক সংস্থা। যে ঘৃণার মূল লক্ষ্য দেশের সংখ্যালঘুরা। মূলত মুসলিমরা। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশ ঘৃণা ভাষণই ঘটেছে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্য অথবা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে। এমনই একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনল ইন্ডিয়া হেট ল্যাব নামে একটি সংস্থা।ইউএসএ-র ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এই সংস্থাটি পরিচালিত হয়। লোকসভা ভোটের আগে এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা বিজেপি ও সংঘ পরিবারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। আর বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, পুরোটাই সাজানো। দেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারকে ম্যালাইন করার জন্য মনগড়া রিপোর্ট।ইন্ডিয়া হেট ল্যাব সংস্থাটি পরিচালনা করেন একদল গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিক। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর ঘৃণা ভাষণের উপর নজরদারি ও রিপোর্ট তৈরি করাই এই সংস্থার কাজ। ২০২৩ সালের রিপোর্টটি দিন কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম অর্ধে ছিল ২৫৫টি হেট স্পিচ।বছরের দ্বিতীয় অর্ধে তা এক লপ্তে ৬২ শতাংশ বেড়ে ৪১৩টিতে দাঁড়ায়। ঠিক ওই সময়ে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মিজোরামের বিধানসভা ভোট চলছিল। এ ছাড়া অক্টোবর মাসে যখন ইজরায়েলে হামাস আক্রমণ শুরু করে তখনও ভারতীয় মুসলিমদের প্রবল ঘৃণা ভাষণের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘৃণা ভাষ্যের দিক থেকে প্রথমে রয়েছে মহারাষ্ট্র। যেখানে ১১৮ বার ঘৃণা ভাষণ দিয়েছেন বিজেপি অথবা সংঘ পরিবারের মতাদর্শে বিশ্বাসী কোনও হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন। এরপরেই রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ, যেখানে গত এক বছরে ১০৪ বার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। ৬৫টি হেট স্পিচ রেকর্ড করে মধ্যপ্রদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।ঘটনাচক্রে, এই তিনটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত। এছাড়াও এই বিষয়ে এগিয়ে থাকা দশটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, গুজরাট, ছত্তিশগড় এবং বিহার। যা হয় বিজেপি শাসিত ছিল অথবা যেখানে বিজেপি পরে ক্ষমতা দখল করেছে। এই তালিকায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই।এই ৬৬৮টি ঘটনার মধ্যে ২৩৯টি ঘৃণা ভাষণের টার্গেট সরাসরি মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে উস্কানি অথবা হিংসা ছড়ানোর জন্য করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে হেট ল্যাবের রিপোর্টে। ‘লভ জিহাদ, ল্যান্ড জিহাদ, হালাল জিহাদ এবং জনসংখ্যা (পপুলেশন) জিহাদ’ই ঘৃণা ভাষণের মূল বিষয় বলে উঠে এসেছে সেখানে।স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি এর তীব্র সমালোচনা করেছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট। দেশকে কলঙ্কিত করার জন্য মন গড়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এর নেপথ্যে বিরোধীদের হাত রয়েছে। বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। এরা পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় রাস্তায় যে হেট স্পিচ চলছে, তার সন্ধান পায় না।’শমীকের সংযোজন, ‘ভারত বিরোধীদের এবং টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠবেই। সেই আওয়াজ তোলার জন্য আরও বেশি কিছু বলার থাকলেও আমরা বলে যাবো।’ হেট স্পিচকেই বিজেপি ও সংঘ পরিবারের সংস্কৃতি বলে কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য, ‘দেশকে আসলে ওরা দ্বেষে পরিণত করতেই এটা করছে। কেবলমাত্র মুসলিমদের নয়, শিখদেরও খালিস্তানি বলা শুরু করেছে। বাংলার মাটিতেও ওরা চেষ্টা কম করছে না। কিন্তু বাংলার সংস্কৃতি, নব জাগরণের ইতিহাস ও বাম মনস্কতার কারণে এটা এখনও পেরে উঠছে না।’ইতিমধ্যে শাসকদল তৃণমূলের তরফে এই রিপোর্ট এক্স হ্যান্ডেলে ছাড়া হয়েছে। তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘এটাই তো বিজেপি আর আরএসএস। ওরা ভাবে এটা করে ওরা ভোটে জিততে পারবে। কিন্তু বাংলার মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাটিতে ওদের সেই অস্ত্র বার বার ভোঁতা হয়েছে।’ গত বছরের অগস্ট মাসে হেট স্পিচ রুখতে সু্প্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে একটি হাই পাওয়ার কমিটি ও ঘৃণা ভাষ্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই কাজ আদৌ এগিয়েছে কি না তা অবশ্য জানা যায়নি।
  • Link to this news (এই সময়)