দিন কাটছিল অতি সাধারণ ভাবেই। চা বিক্রি করেই দিন শেষে যা আয় হচ্ছিল তা দিয়েই কোনও রকমে চলছিল সংসার। তবে অভাব-অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। হঠাৎই একদিন অভাবনীয় কাণ্ড। রাতারাতি ফিরল ভাগ্য। আজও তিনি চা-ওয়ালাই আছেন বলে। তবে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠবে।কী ভাবে জীবন বদল?
তাঁকে চা-ওয়ালাদের'আইকন' বললেও অত্যুক্তি হবে না। রীতিমতো নেট দুনিয়ায় সেনসেশন তিনি। বলছি ডলি চা-ওয়ালাকার কথা। তাঁর তৈরি চায়ে চুমুক দিয়ে গলে গিয়েছেন খোদ মাইক্রোসফটের কর্নাধার। প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন কী ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে 'ভাইরাল' হলেন ডলি? কী ভাবেই বা বিল গেটসের প্রশংসা কুড়োলেন?
মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা ডলি। গত কয়েক দশক ধরে তাঁকে সকলে চেনে 'ডলি চায়ওয়ালা' নামেই। আর পাঁচ জন চা বিক্রেতার থেকে তাঁর বিক্রির পদ্ধতির এক্কেবারে আলাদা। ডাকাডাকি-হাঁকাহাঁকি থেকে পরিবেশন সবেতেই অন্যরকম 'কেতা'। আর সেই 'কেতাতেই' মন জিতে নিয়েছেন বহু মানুষের। তাঁর চায়ের জাবরা ফ্যান হয়ে গিয়েছেন খোদ বিল গেটসও। ডলির 'টাপরি স্টাইল চা'-তে চুমুক দেওয়ার আমেজ ভুলতে পারেননি বিল গেটস। ডলির আসল নাম অবশ্য সুনীল পাতিল'। ১৯৯৮ সালে জন্ম। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার ছাড়িয়েছে ১০ হাজার। নিজস্ব স্টাইল থেকে চায়ের স্টাইল সবেতেই এক্কেবারে 'হাটকে'। 'হাটকে' স্টাইলই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছেন জনপ্রিয়তার শিখরে। নাগপুরের রাস্তায় সাধারণ এক চা বিক্রেতার মতোই শুরু হয়েছিল সুনীল থুড়ি ডলির পথ চলা। অভাবে তাড়নাতেই শুরু করেছিলেন চা বিক্রি, তবে ভালোবেসেছিলেন পেশাকে। সেই ভালোবাসা থেকেই প্রথম থেকেই তাগিদ ছিল যাই করবেন তাতে হয়ে উঠবেন সেরা। তার জন্য পরিশ্রমও করতে হয়েছে বিস্তর। আর সেই পরিশ্রমের ফলও মিলেছে। অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ার তেমন সুযোগ পাননি। সেই আক্ষেপ থাকলেও খ্যাতির আক্ষেপ নেই। হাতের জাদুতেই মন ছুঁয়েছেন বহু মানুষের। নাগপুর এলাকা দিয়ে গেলে ডলির তৈরি গরমা গরম চায়ে একবার চুমুক দেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বর্তমানে বোধহয় বিরল।
দেখুন বিল গেটসের ভিডিয়ো View this post on Instagram A post shared by Bill Gates (@thisisbillgates)
কী ভাবে ইনটারনেট সেনসেশন হয়ে উঠলেন ডলি?
কী ভাবছেন ইন্টারনেট ভাইরাল হয়ে উঠতে কী একাই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ডলি। না তা কিন্তু একাবারেই নয়। 'ভাগ্য দেবতা' সহায় হয়েছেন বৈকি। বরং একটু বেশিই সদয় হয়েছিলেন তাঁর উপর। ডলির তৈরি বিখ্যাত চা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু সার্চ করলেই উঠে আসবে। একসময় বহু মানুষের টাইমলাইনে ঘুরেওছে। নেটের ভাইরাল ভিডিয়ো দেখেই বহু মানুষ ভিড় জমান তাঁর স্টলে। ব্যাস এভাবেই ধীরে ধীরে বিখ্যাত হয়ে উঠতে থাকেন ডলি। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য ডলির অন্যন্য স্টাইলের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। তাঁর লম্বা চুল, গলায় হার-হাতে বালা-চোখে গগজ-কানে তিন-চারটে দুল সহ আদপ কায়দা আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা। আর পাঁচ জন বিক্রেতার থেকে তাঁর এই স্টাইল স্টেটমেন্টই আকর্ষণ করেছিল বহু ক্রেতাকে। বিখ্য়াত হওয়ার নেপথ্য তাঁর ইউনিক স্টাইল স্টেটমেন্ট বেশ কাজে এসেছে। খুব অল্প সময়েই সুনীল থেকে সকলের প্রিয় 'ডলি ভাই' হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ আবার তাঁকে 'জ্য়াক স্প্যারা'-এর সঙ্গে তুলনা করেন।
ডলির মোট সম্পত্তি
বর্তমানে ডলির সম্পত্তির পরিমাণ ১০ লাখ। অল্প সময়ের মধ্যেই এই সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন তিনি। ডলির কাছে এক কাপ চায়ের দাম ৭ টাকা। প্রতিদিন তাঁর আয় হয় ২৪৫০টাকা-৩৫০০ টাকার মধ্যে। প্রতিদিন বিকোয় প্রায় ৩৫০ থেকে ৫০০ কাপ চা।
ডলির চায়ের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং বিলগেটস। সেই ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রাম আপলোড করতেই হু হু করে ভাইরাল। বিল গেটসের জন্য এক কাপ চা তৈরি করে পোজ দিয়ে ছবিও তুলেছেন ডলি। ডলির তৈরি চা খেয়ে ধন্য ধন্য করছেন বিল গেটসও। তবে তিনি যে বিল গেটসের জন্য চা তৈরি করেছেন তা অবশ্য জানতেই না ডলি।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলার সময় ডলি বসেন, 'আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি কার জন্য চা বানিয়েছি আমি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও বিদেশি হয়তো আমার দোকানে চা খেতে এসেছেন। পরের দিন যখন নাগপুরে পৌঁছলাম তখন আমি বুঝতে পারি আমি আসলে কাকে চা খাইয়েছি। আমার সঙ্গে বেশি কথাও হয়নি ওঁর (বিল গেটস)। শুধু আমার তৈরি চায়ে চুমুক দিয়ে প্রশংসা করে বললেন ওয়াও, ডলির চা দারুণ।' একেবারে অন্যরকম আদপ-কায়দার চা তৈরির কৌশল কোথা থেকে শিখলেন? এর উত্তরে ডলি জানিয়েছেন, 'কেউ শেখাননি। দক্ষিণী সিনেমা দেখে এমন পদ্ধতি রপ্ত করেছেন।' বর্তমানে ডলির উইশলিস্টে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একবার অন্তত প্রধানমন্ত্রীকে চা বানিয়ে খাওয়াতে চান ডলি। রাতারাতি বিখ্যাত হয়েও অবশ্য জীবনের বেশি কিছু চাহিদা নেই ডলির। এরকম ভাবেই সারা জীবন সকলে তাঁর তৈরি চা খেয়ে প্রশংসা করুক এটাই কায় মন বাক্যে প্রার্থনা।