বাংলাদেশি নাগরিকদের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা নাড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। সিংহদুয়ারের কাছে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। নাগাড়ে নজরদাড়ি সত্ত্বেও কী ভাবে অ-হিন্দুরা পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কিন্তু, জানেন কি কেন জগন্নাথধামে মুসলিম কিংবা অ-হিন্দু নাগরিকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না?জগন্নাথধামে কাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ?১২ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে বরাবরই বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মন্দিরের সেবায়েত, জগন্নাথধামের গবেষক এবং জগন্নাথধামের সংস্কৃতির সঙ্গে অতপ্রতোভাবে জড়িতরা কট্টরভাবে এই নিয়ম মেনে চলার পক্ষে।
কেন এমন নিয়ম পুরীর মন্দিরে?চারধামের মধ্যে অন্যতম জাগ্রত পুরীর জগন্নাথধাম। এখানে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসেবে পুজিত হন জগন্নাথদেব। নিয়মিত পুজো পান বড় ভাই ভগবান বলরাম এবং বোন দেবী সুভদ্রা। আর এই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার রয়েছে কেবলমাত্র হিন্দুদেরই। ফলে মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার সিংহদুয়ারের সামনে একটি বড় সাইনবোর্ড টাঙানো। যেখানে লেখা রয়েছে, 'কেবলমাত্র হিন্দুদের প্রবেশে অনুমতি'। যুগের পর যুগ ধরে এই রীতি পালিত হয়ে আসছে পুরীর মন্দিরে। তবে এর কোনও নির্দিষ্ট কারণ মন্দিরের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও প্রকাশ করা হয়নি।
যদিও ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, একাধিকবার মুসলিমদের পক্ষ থেকে এই মন্দিরে হামলা চালানো হয় অতীতে। হয়তো সে কারণেই সেবায়েতরা মুসলিমদের এই জগন্নাথধামে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কিছু গবেষকের আবার অনুমান, মন্দির তৈরির সময় থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ থাকবে জগন্নাথধামে।
রথযাত্রার সময় ভগবান বলরাম এবং দেবী সুভদ্রার সঙ্গে বিশ্বের অধিপতি ভগবান জগন্নাথদেবকে বড় দণ্ডতে নিয়ে আসা হয়। একমাত্র এই সময় দর্শন করার সুযোগ দেওয়া হয় অ-হিন্দুদের। রথযাত্রার দিন মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় তিন ভগবানকে। এই সময় পুরীর জগন্নাথধামে ভক্তদের ঢল নামে। তাতে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম এবং অন্য ধর্মের মানুষকেও দর্শনের অনুমতি থাকে। অন্য সময় মুসলিম নাগরিকদের এই মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়ার ঘোরতর বিরোধী জগন্নাথধামের সেবায়েতরা। সেবায়েতদের বিশ্বাস জগন্নাথদেবও অ-হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশের অনুমতির ক্ষেত্রে কোনওদিন কোনও অলৌকিক ইঙ্গিত দেননি।
প্রবেশ করতে বাধা ইন্দিরা গান্ধীকে১৯৮৪ সালে পুরীর মন্দিরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি একজন অ-হিন্দুকে বিয়ে করেছিলেন বলে সেবায়েতরা তাঁকে জগন্নাথধামে প্রবেশে বাধা দেন। যা নিয়ে প্রবল হইচই পড়ে গিয়েছিল। মন্দিরের নিকটস্থ রঘুনন্দন লাইব্রেরী থেকেই জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
আবার, ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের রাজকুমারী মহা শ্রীনিধর্ন প্রথম ওডিশা সফরে পৌঁছন। তিনি বাইরে থেকেই মন্দিরের দর্শন করেন। বিদেশি বলে তাঁকে প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০০৬ সালে সুইস নাগরিক এলিজাবেথ জিগলারকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও এলিজাবেথ পুরীর মন্দিরে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মুক্ত হস্তে দান করেছিলেন।