Bombay High Court: বম্বে হাইকোর্টে পুনর্বিচারেও মুক্তি সাইবাদের
এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৪
এই সময়: পুনর্বিচারেও বেকসুর মুক্তিরই নির্দেশ হলো জিএন সাইবাবার। মাওবাদী যোগ এবং মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলিতে সন্ত্রাসের পরিকল্পনার অভিযোগে দায়রা আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দিল্লির রামলাল আনন্দ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক সাইবাবা ও তাঁর সহবন্দি ৫ জনকে মঙ্গলবার বেকসুর মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ৷ইউএপিএ’র ধারায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, নাশকতার পরিকল্পনার যে অভিযোগে জীবনের একটি দশক জেলেই নষ্ট হলো সাইবাবাদের, সেই অভিযোগের পক্ষে জোরালো কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই বলে রায়ে জানিয়েছে বিচারপতি বিনয় জোশী ও বিচারপতি বাল্মীকি এসএ মেঞ্জেসের ডিভিশন বেঞ্চ। অবিলম্বে সাইবাবাদের মুক্তি দিতে বলেছে হাইকোর্ট। এই নির্দেশ সাময়িক স্থগিতের আবেদন জানিয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার। আমল দেয়নি হাইকোর্ট। তবে যে কোনও প্রকারে মুক্তি আটকাতে মরিয়া মহারাষ্ট্র সরকার এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।
বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ এর আগেই ২০২২-এর অক্টোবরে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল সাইবাবাদের। কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্রের আর্জিতে অভূতপূর্ব ভাবে শনিবার ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে মুক্তির সেই নির্দেশ স্থগিত করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পরে বম্বে হাইকোর্টকে বেঞ্চ বদলে মামলা পুনর্বিচারের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত (আগের বেঞ্চের বিচারপতি রোহিত দেও পরে পদত্যাগ করেন আত্মসম্মানের প্রশ্নে আপস করতে চান না বলে)। পুনর্বিচার-প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
সাইবাবার সঙ্গে যে পাঁচ জনকে বেকসুর ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট, তাঁরা হলেন--উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের সাংবাদিক প্রশান্ত রাহি, ওই রাজ্যেরই আলমোড়ার শিক্ষক হেম মিশ্র, গড়চিরৌলির কৃষিশ্রমিক মহেশ তির্কি, কাঁকেরের দিনমজুর বিজয় তির্কি এবং গড়চিরৌলির আর এক কৃষিশ্রমিক পাণ্ডু নারোটে। তবে দুর্বিষহ জেলজীবনে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগটুকু না-পেয়ে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন পাণ্ডু। ২০২২-এর তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে সাইবাবার স্ত্রী বসন্তা বা প্রশান্ত রাহির মেয়ে শিখা জেলের বাইরে প্রিয়জনকে না-দেখা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না।
দায়রা আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেই কলেজে অধ্যাপনার চাকরি খোয়ান সাইবাবা। নব্বই শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী, সারাক্ষণ হুইলচেয়ারে বন্দি মানুষটিকে অনেকটা ফাদার স্ট্যান স্বামীর মতোই নাগপুর জেলের আন্ডা সেলে দুঃসহ জীবন কাটাতে হয়েছে। ইংরেজির এই জনপ্রিয় অধ্যাপকের পড়ানো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। সাইবাবাদের বেকসুর মুক্তি আবারও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী বিশেষ আইন ইউএপিএ নিয়ে।
আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগহীন ব্যবস্থায় বিশেষ আদালতে বিচারের যে বন্দোবস্ত এই আইনে, তা বাতিলের দাবি উঠছে অনেক দিন থেকেই। এই আইনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নামে নাগরিকের মৌলিক অধিকার, আইনি রক্ষাকবচ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলে বলে আগের দফার রায়ে মন্তব্য করেছিল বম্বে হাইকোর্টও। এই প্রেক্ষিতে সাইবাবাদের মুক্তির রায় গণতান্ত্রিক শক্তির জয় বলে অভিহিত করেছে নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি৷
মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদা পড়ুয়া হেম মিশ্র এবং সাংবাদিক প্রশান্ত রাহিকে ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ৷ ইউএপিএ’র নানা ধারায় মামলা রুজু হয়। তাঁদের গ্রেপ্তারির সূত্রে ধরে সাইবাবার বিরুদ্ধেও মাওবাদী সংস্রব, সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে আদালতে দাবি করে পুলিশ৷ ২০১৪-য় গ্রেপ্তার হন ওই অধ্যাপক। পরে গুরুতর শারীরিক পরিস্থিতির কারণে জামিন পেলেও ২০১৭ সালে গড়চিরৌলির বিশেষ দায়রা আদালত সাইবাবা-সহ ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
জেলে নিত্য কাজে সহায়ক পেতেও বার বার হয়রান হয়েছেন শারীরিক ভাবে অসহায় সাইবাবা। দু’দুবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তিতেও টালবাহানা চালিয়ে গিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মায়ের গুরুতর অসুস্থতা এবং তাঁর মৃত্যুর পরে প্যারোলটুকুও পাননি। দীর্ঘ কারাবাসের এহেন অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যেও ‘হোয়াই ডু ইউ ফিয়ার মাই ওয়ে সো মাচ?’ শিরোনামে সাইবাবার কবিতা-প্রবন্ধ-চিঠির একটি সংকলন প্রকাশিত হয় দু’বছর আগে। সেখানে ফের খোলা আকাশের নীচে সবুজ ঘাষে পদচারণার আশা প্রকাশ করেছিলেন সাইবাবা। এত দিনে হয়তো তা সত্যি হতে চলেছে।