ভুট্টোর ফাঁসি ন্যায় বিচারই ছিল না: পাক সুপ্রিম কোর্ট
এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৪
এই সময়: প্রায় সাড়ে চার দশক আগের কথা। পাক সেনাশাসক জিয়াউল হকের আমলে বিতর্কিত একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তৎকালীন ক্ষমতাচ্যুত পাক প্রধানমন্ত্রী জ়ুলফিকার আলি ভুট্টোকে। ১৯৭৮ সালের ১৮ মার্চ ভুট্টোকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাক সুপ্রিম কোর্ট। পরের বছর ৪ এপ্রিল ফাঁসিকাঠে তোলা হয় বছর একান্নর ভুট্টোকে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টই এদিন এই সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে সাফ জানিয়ে দিল, ওই বিচারপ্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ন্যায়বিচার পাননি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী জ়ুলফিকার আলি ভুট্টো।জ়ুলফিকারের হাতে গড়া পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি) সঙ্গে নিয়েই এ বার সরকার গড়েছে নওয়াজ় শরিফের দল। দাবিদার হলেও স্বেচ্ছায় শেহবাজ় শরিফকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছেন জ়ুলফিকারের নাতি ‘কিংমেকার’ বিলাবল ভুট্টো। সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর প্রতিক্রিয়া— ‘আমাদের পরিবার এই রায়ের জন্যই তিন প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করছিল। জানতাম একদিন সুবিচার পাবই।’ ২০০৭-এ খুন হন বিলাবলের মা প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী জ়ুলফিকার-কন্যা বেনজির ভুট্টো। সেই খুনের অবশ্য কিনারা হয়নি আজও।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতদিন পরে কেন জ়ুলফিকারের মামলা নিয়ে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট? সূত্রের খবর, এর পিছনেও কাজ করেছে পারিবারিক চাপ। ২০১১-য় পিপিপি নেতৃত্বাধীন জমানায় জ়ুলফিকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ‘ফ্রেশ’ পর্যবেক্ষণের দাবিতে আর্জি জানান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তথা বিলাবলের বাবা আসিফ আলি জ়ারদারি। তার প্রেক্ষিতেই বুধবার নিজেদের রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আসিফই এখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। বাবার প্রেসিডেন্ট পদ নিশ্চিত করেই বিলাবল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে সরে আসেন বলে শোনা যায়।
এ দিন জ়ুলফিকার মামলার রায় দিতে গিয়ে পাক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কাজি ফয়েজ ঈশা কোর্ট থেকে লাইভ টেলিকাস্টে জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘সাড়ে চার দশক আগে জ়ুলফিকার মামলায় সুষ্ঠু বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল বলে কোনও প্রমাণই আমরা পাইনি।’ একাধিক পাক মিডিয়ার দাবি, লিখিত পর্যবেক্ষণে পাক সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, লাহোর হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে জ়ুলফিকার মামলায় সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকারের শর্তগুলি পূরণ করা হয়নি। পাক সংবিধানের ৪ ও ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়ার যে সব বিধান রয়েছে, তা-ও অনুসরণ করা হয়নি বলে এ দিন জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ় শরিফও সুপ্রিম-রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আদালতের করা ভুল যে আদালতের মাধ্যমেই সংশোধন করা হলো, তা অবশ্যই অত্যন্ত ইতিবাচক একটা ব্যাপার।’