রাস্তায় পুলিশি তল্লাশি, মোদীর সঙ্গে দেখা হলো না মহিলাদের
এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৪
আশিস নন্দী, বারাসত
কথা ছিল, সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলাদের নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের পাশে আলাদা মঞ্চে বসানো হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছিল আগেই। তার পর ঠিক হয় সন্দেশখালি থেকে প্রায় হাজার খানেক মহিলা আসবেন বারাসতের কাছারি ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে। বুধবার সেই পরিকল্পনাও পুরোটা সফল হলো না বিজেপির।সমাবেশ মঞ্চ থেকে বক্তব্য শেষ করে মোদী নেমে আসার পর মঞ্চের নীচে নেমে গাড়িতে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলাদের পাঁচ জনের একটি দল দেখা করেন তাঁর সঙ্গে। কিন্তু সন্দেশখালি থেকে আসা মহিলারা দেখা করার সুযোগই পেলেন না মোদীর সঙ্গে। বারাসতের সভায় আসার জন্য এ দিন সকাল ছ’টায় বেশ কয়েকটি বাসে করে সন্দেশখালির কয়েকশো আন্দোলনকারী মহিলা রওনা দিয়েছিলেন।
অভিযোগ, তাঁদের গাড়ি পুলিশ প্রথমে আটকে দেয় নিউ টাউনের হাতিশালায়। পরে ভোজেরহাট ও এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেটেও পুলিশ গাড়ি আটকানোয় একেবারে সভা শেষের মুহূর্তে তাঁরা কাছারি ময়দানে এসে পৌঁছন। অধিকাংশ মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পারলেও, পাঁচ জন নির্যাতিতা দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁদের প্রতি অত্যাচারের বিবরণ ওই মহিলারা তুলে ধরেন মোদীর সামনে।
মাত্র সাত মিনিটের সেই সাক্ষাতে নির্যাতিতাদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্যাতিতারা তাঁকে প্রণাম জানালে মোদীও হাতজোড় করে তাঁদের সম্মান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনারাই এক একজন মা দুর্গা। আপনাদেরই প্রণাম করা উচিত।’ নির্যাতিতরা পুলিশের উপর আস্থা না থাকার কথা বললে প্রধানমন্ত্রী এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আশ্বাস দেন।
মোদী চলে যাওয়ার পরেই আন্দোলনকারী সন্দেশখালির অধিকাংশ মহিলা সভাস্থলে এসে পৌঁছন। কিন্তু ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় বেরিয়ে গিয়েছে। মোদীর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সুজাতা দাস দে, কমলা দে সরকার, স্বপ্না খণ্ডিত, রেখা পাত্র, পাপিয়া দাসদের চোখে মুখে তখন হতাশা এবং ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট। মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আর তাঁরা দেখা করবেন না। তাঁদের স্পষ্ট কথা, ‘আমাদের অত্যাচারের কথা শুনতে প্রধানমন্ত্রীকে এ বার সন্দেশখালিতে আসতে হবে।’
মঙ্গলবার পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বের দাবি ছিল, সন্দেশখালি থেকে হাজারের বেশি মহিলাকে নিয়ে আসা হবে বারাসতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর প্রায় একশো জন মহিলা এসে পৌঁছেছেন। তাঁদের সময় মতো সভাস্থলে নিয়ে আসতে না পারার পিছনে বসিরহাট লোকসভা-সহ জেলা বিজেপির নেতৃত্বদের মধ্যে সমন্বয়ের ফাঁক রয়েছে বলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই।
সুজাতা দাস নামের এক মহিলা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য অপেক্ষা না করেই চলে গেলেন। মাত্র পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বললেই কি সব হয়ে গেল? আন্দোলন তো আমরাই করেছি।’ কমলা দে সরকার নামে এক মহিলা বলেন, ‘আমাদের গাড়ি তল্লাশির নাম করে অযথা দেরি করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ির চালকও আস্তে আস্তে চালিয়েছে।’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত।’ বসিরহাট লোকসভার বিজেপির কনভেনার বিকাশ সিং বলেন, ‘পুলিশ রাস্তায় তিন দফায় আটকে দেওয়ার কারণেই আমরা সব মহিলাদের সময়মতো নিয়ে আসতে পারিনি। তবে, লোকসভার আগে সন্দেশখালি বা এর কাছাকাছি কোনও জায়গায় প্রধানমন্ত্রী যাতে আসেন, তার চেষ্টা করছি।’