এই সময়, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি: রেলের অনুষ্ঠানে বিজেপির মনোনীত প্রার্থী মনোজ টিগ্গার মুখোমুখি হতেই রেগে কাঁই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। মাদারিহাট রেল স্টেশনে মনোজের দিকে আঙুল তুলে তিনি চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে।’ বেনজির এই আক্রমণের ঘটনায় তাল কেটে যায় রেলের অনুষ্ঠানের। জন বার্লার চিৎকারের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি অনুষ্ঠানে এসে তাঁর এই আচরণে হতভম্ব হয়ে যান সকলেই।মাদারিহাটের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে বুধবার থেকে মাদারিহাট স্টেশনে দাঁড়াচ্ছে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। কিছুদিন আগেই মাদারিহাটে এসে ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জন। কিন্তু এদিন সবুজ পতাকা দেখিয়ে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসকে স্বাগত জানান স্থানীয় বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন জন বার্লাও।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে মাদারিহাট স্টেশনে হাজির হন তিনি। সেখানে মনোজ টিগ্গাকে দেখা মাত্রই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাংসদ। গলা সপ্তমে চড়িয়ে মনোজের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন তিনি। বলে ওঠেন, ‘মনোজের তো ১৫টি ডাম্পার আছে, পেট্রল পাম্প আছে, সেগুলো কেউ দেখে না? সে খুব সৎ? আর আমি মানুষের জন্যে কিছুই করিনি? মনোজ প্রার্থী পদ প্রত্যাহার না করলে আমি কিছুতেই প্রচারে নামব না।’
শেষে রাগারাগি করে চলে যান জন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার সঙ্গে ছলনা করেছে মনোজ টিগ্গা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় দলের ভরাডুবির পরে আমিই ওকে জেলা সভাপতির পদে বসিয়েছিলাম।’
জন বার্লা মেজাজ হারালেও গোটা ঘটনার পরে মনোজ টিগ্গার প্রতিক্রিয়া, ‘আজ মাদারিহাটের মানুষ যে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের স্টপ পেলেন, তার পুরো কৃতিত্বই জন বার্লার। আমি তো দলের কাছে প্রার্থী হওয়ার জন্য তদ্বির করিনি। দলই আমাকে টিকিট দিয়েছে। আর জন আমার বিরুদ্ধে ১৫টি ডাম্পার ও পেট্রল পাম্পের মালিকানার যে অভিযোগ এনেছেন, সেই প্রমাণ দেওয়ার দায় তাঁরই।’
অবশ্য উত্তাপ ছড়িয়েছিল মঙ্গলবারই। মনোজের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন জন। মনোজকে ভোট নয় বলে স্লোগানও তোলেন তাঁর অনুগামীরা। এমনকী, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন মন্ত্রী নিজেই। তার পরেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে বুধবার সকাল সকাল তাঁর বাড়িতে যান রাজ্য বিধানসভার চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গা। সঙ্গে ছিলেন ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মনও। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কখনও ঘরে, কখনও বাইরে অপেক্ষা করেন তাঁরা, তবে জন বার্লার দেখা মেলেনি। ফিরে যেতে হয় তাঁদের।
এর পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মনোজের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন জন। খানিক পরে ফের একই কথা তাঁকে বলতে শোনা যায় মাদারিহাট স্টেশনে।এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, ‘বুধবারের ঘটনাতেই স্পষ্ট যে, আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে কতটা ব্যাকফুটে রয়েছে বিজেপি। এর বিচার মানুষই করবেন।’