মিরাকল! দিল্লিতে প্রথম হাত প্রতিস্থাপনে ‘নবজীবন’ শিল্পীর
এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৪
এই সময়: তাঁর রঙ-তুলির জীবন সে দিন হঠাৎ থমকে গিয়েছিল। ব্যালেন্স হারিয়ে সাইকেল নিয়ে রেললাইনে পড়ে গিয়েছিলেন। পড়ে থাকা অবস্থাতেই দেখেছিলেন দৈত্যের মতো ধেয়ে আসছে ট্রেন। নির্ঘাত মৃত্যু! কপালজোরে বেঁচে গেলেও সে দিন দু’হাত কাটা পড়েছিল পেশায় চিত্রশিল্পী বছর পঁয়তাল্লিশের রাজ কুমার নামের ওই ব্যক্তির। তারপর? আর কোনও দিন ছবি আঁকাই হবে না— এটা ধরে নিয়ে ঘাতক অবসাদে চলে যাওয়ার মুখে কার্যত নতুন জীবন পেলেন শিল্পী। মিরাকল।জোড়া হাত প্রতিস্থাপনে উত্তর ভারতের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে নজির গড়ল দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতাল। ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় ১১ জন ডাক্তারের টিম নিখুঁত ভাবে অন্যের দুই হাত জুড়ে দিলেন শিল্পীর হাতে। সৌজন্যে, দক্ষিণ দিল্লির এক স্কুলের প্রশাসনিক প্রধান মীনা মেহতা। ব্রেন ডেথ হওয়া সেই মহিলার হাতই জোড়া লাগল পুরুষের শরীরে। তাতে কী! এবার থেকে ‘নিজের দু’হাতে’ সব কাজই করতে পারবেন রাজ কুমার।
রাজ কুমারই যে হেতু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন, তাই ২০২০-র ওই দুর্ঘটনায় জীবনটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তাঁর। তিনি ছবি না আঁকতে পারলে তো পরিবারটাই ভেসে যাবে! একটা আশ্বাস অবশ্য দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। বলেছিলেন, কঠিন হলেও দাতা পাওয়া গেলে হাত-প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা যেতে পারে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সেই অনুমতি পায় হাসপাতাল। তারপর শুরু হয় দাতার জন্য অপেক্ষা। মীনা মেহতা সেই বন্দোবস্তও করে দেন। ব্রেন-ডেথ হওয়ার পর তাঁর লিভার-কিডনি-হার্টের পাশাপাশি দু’টো হাতও প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সম্প্রতি হয়ে গেল সেই জটিল হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিও।
বিশ্বে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন হয় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে। ভারতে এর আগে খুব সম্ভবত ১৫টি এমন অপারেশন হয়েছে। বেশির ভাগই দক্ষিণ ভারতে। মাস দুয়েক আগে উত্তর ভারতের প্রথম হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট হয় ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালে। তবে সেটা ছিল শুধু বাঁ হাত প্রতিস্থাপন। কলকাতা অবশ্য তারও আগে পথ দেখিয়েছে। গত বছর এসএসকেএম হাসপাতালে হয়েছিল সেই সার্জারি। যদিও আক্ষেপ, প্রতিস্থাপিত হাত বাঁচানো যায়নি।
কেন এই হাত প্রতিস্থাপন এত কঠিন, সেই প্রসঙ্গে এসএসকেএমের ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, কিডনি কিংবা লিভার অথবা হার্টের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার যেখানে ৭০-৯০%, সেখানে হাত প্রতিস্থাপনে সাফল্যের সম্ভাবনা ২০% বড়জোর। কেননা, গ্রহীতার শরীরের ইমিউনিটিই নতুন অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করে। চিকিৎসার পরিভাষায়, হাইপার-অ্যাকিউট অ্যান্টিবডি মিডিয়েটেড রিজেকশন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অনেক সময় দেখা যায় হাড়-মাংস বা ধমনী জুড়লেও ‘নতুন’ শরীরে সেই হাত ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না, অথবা নতুন বসানো হাতে রক্ত সরবরাহ হচ্ছে না। দিল্লি স্যর গঙ্গারাম হাসপাতাল যদিও ১২ ঘণ্টার অপারেশনে কার্যত অসাধ্যসাধনই করেছে বলে দাবি সেখানকার চিকিৎসকদের। এখন অপেক্ষা— রাজ কুমার ফের কবে রং-তুলি হাতে নিয়ে বসেন নিজের পছন্দের ক্যানভাসের সামনে!