চিকিৎসক থেকে রাজনীতির আঙিনায়, তৃণমূলের মুকুট ১৯-এ পেয়েছিলেন বিজেপির টিকিট, তারপর অঘটন!
এই সময় | ০৭ মার্চ ২০২৪
তুহিনা মণ্ডল|এই সময় ডিজিটাল
বিষ্যুদের মাঝবেলা। বঙ্গ রাজনীতির হিসাব অনেকটাই বদলাল! অন্তত খালি চোখে এমনটাই বিশ্লেষণ ওয়াকিবহাল মহলের। মতুয়া মুখ হিসেবে বিজেপি যে মুকুটমণি অধিকারীকে সামনে এনেছিল, সেই বিধায়কই যোগ দিলেন তৃণমূলে। আর এর ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খেল বঙ্গ গেরুয়া শিবির, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
কে এই মুকুটমণি অধিকারী?
তরুণ এই নেতা পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি মতুয়াদের নেতা হিসেবে রাজনীতির ময়দানে উঠে আসেন। তাঁর ফোকাসে আসা ২০১৯ সালের ধারাপাশে। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের পর স্থানীয় মতুয়াদের ভোট পদ্ম শিবিরে চাইছিলেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। সেই সময় নজর যায় মুকুটমণির উপরে।
২০১৯ সালে তাঁকে ভোট ময়দানে নামিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সেই প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়।২০১৯ সালে 'ডাক্তারবাবু'-র ভোটে দাঁড়ানো হয়নি
প্রস্তুত ছিল বঙ্গ বিজেপি শিবির। কিন্তু, শেষমেশ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হওয়া হয়নি মুকুটমণি অধিকারীর। স্ক্রুটিনির সময়সীমা পার হওয়া পর্যন্ত সরকারি চিকিৎসক হিসেবে তাঁর ইস্তফা গ্রাহ্য করা হয়নি। রানাঘাট কেন্দ্রের জন্য তাঁকেই প্রার্থী করতে চান গেরুয়া শিবির। কিন্তু, সেই সময় বাংলার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মুকুটমণি অধিকারী। ফলে সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তাঁকে ভোটে লড়াই করতে হত।
মুকুটমণি প্রকৃত বিজেপি কর্মী হলে কখনই দল ছেড়ে চলে যেতেন নাজগন্নাথ সরকার
সেই মোতাবেক তিনি ইস্তফা দিলেও তা গ্রহণ হয়নি। এরপর তিনি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল-এ (স্যাট)-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু, স্ক্রুটিনির নির্ধারিত সময় পেরনো পর্যন্ত এই মামলার মীমাংসা হয়নি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন তিনি। তবে শিকে ছেঁড়েনি। এরপরেই প্রার্থী করা হয় জগন্নাথ সরকারকে। সেই সময় বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মুকুট শিবিরের সদস্যরা। জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে সকলের সমর্থন রয়েছে।
মুকুটমণি অধিকারী
বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী
লোকসভা নির্বাচনে হতাশ হলেও বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন বর্ণালী দে রায়। তিনি ১৬ হাজার ৫১৫ ভোটে মুকুটমণি অধিকারীর কাছে পরাজিত হন।
জগন্নাথ vs মুকুটমণি
জগন্নাথ সরকারের সঙ্গে মুকুটমণি অধিকারীর 'ঠান্ডা লড়াই'-এর কথা রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়। দলের অন্দরে জগন্নাথকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন মুকুটমণির অনুগামীরা, উঠেছিল এমনই অভিযোগ। শুধু তাই নয়, মতুয়া সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও দুই নেতার মধ্যে মতের মিল হচ্ছিল না বলে সামনে আসে খবর। জগন্নাথ সরকার সাংসদ হওয়ার পর তাঁকে সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়। সেই জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মানবেন্দ্রনাথ রায়কে । অন্যদিকে, মুকুটমণিকে করা হয় জেলা কমিটিতে অন্যতম সম্পাদক।
মুকুটমণি অধিকারী
মুকুটমণি অধিকারীর তৃণমূলে যোগদান কি লোকসভায় বিজেপির মতুয়া ভোটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে?হ্যাঁনাজানি না
সেই সময় তাঁর প্রতিপত্তি বাড়তেই থাকে। মনে করা হচ্ছিল ২০১৯ সালে না পারলেও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জগন্নাথের বদলে প্রার্থী হিসেবে মুকুটমণির উপর ভরসা রাখবে বিজেপি। কিন্তু, পরীক্ষিত প্রার্থী জগন্নাথকেই সৈনিক হিসেবে বেছে নেয় গেরুয়া শিবির। শোনা যায়, এরপরেই নাকি বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুকুটমণি। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়েও তোলেন প্রশ্ন। এই নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছিল।
শেষমেশ যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি যোগ দিলেন তৃণমূলে। এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, মুকুটমণিকে কি রানাঘাট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করবে তৃণমূল? এই নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি এই তরুণ তুর্কি। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, পুরোটাই দলীয় বিষয়। এদিকে মুকুটমণি অধিকারীর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে জগন্নাথ সরকার বলেন, 'মুকুটমণি প্রকৃত বিজেপি কর্মী হলে কখনই দল ছেড়ে চলে যেতেন না। ওঁর মস্তিষ্কও বোধহয় সুস্থ নয় এখন। এতে বিজেপির কোন ক্ষতি হবে না।'
ব্যক্তিগত জীবন এবং বিতর্ক
বিয়ের ১১ দিনের মাথায় বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী। তিলজলা থানাতেই তিনি দায়ের করেছিলেন অভিযোগ। তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ থেকে শুরু করে তাঁকে আটকে রাখা, হুমকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও তোলেন মুকুটমণির স্ত্রী। মামলার জল গড়ায় বহুদূর পর্যন্ত। যদিও প্রথম থেকেই অভিযোগ মানতে নারাজ মুকুটমণি।