West Bengal School : হাইকোর্টের নির্দেশেও মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন করায়নি ৩৬০০ স্কুল!
এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৪
স্নেহাশিস নিয়োগী
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পর পেরিয়ে গিয়েছে দু’সপ্তাহ। অথচ সাড়ে তিন হাজারের বেশি স্কুল আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পড়ুয়াদের নামই এখনও রেজিস্ট্রি করেনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদে! পর্ষদ অনুমোদিত রাজ্যের মোট স্কুলের এক-তৃতীয়াংশই রেজিস্ট্রেশন বকেয়া ফেলে রেখেছে। পর্ষদ দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্তির আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
পর্ষদ গত বছর ২৯ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ২০২৪-এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড বিলির সময়েই স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ১০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে এই মর্মে মুচলেকা দিতে হবে যে, ২০২৫-এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন আর বাকি নেই।পর্ষদের শর্ত মেনে যে সব স্কুল এই মুচলেকা দেবে না, তাদের পড়ুয়াদের আগামী বছরের অ্যাডমিট কার্ড পেতে বিলম্ব হতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়। মুচলেকা দেওয়া নিয়ে পর্ষদের সঙ্গে স্কুলগুলির লড়াই গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টেও।
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু গত ৩০ জানুয়ারি পর্ষদের ওই বিজ্ঞপ্তি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কার্যকরী করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেন। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস (এএসএফএইচএম)। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ গত ২২ ফেব্রুয়ারি এএসএফএইচএম-র সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
তার পরেও পর্ষদ অনুমোদিত রাজ্যের ৩৬০১টি স্কুল ১ মার্চ পর্যন্ত আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন জমা করেনি। এই বিপুল সংখ্যক স্কুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরই পর্ষদ অনুমোদিত চারটি স্কুল নির্ধারিত সময়ে ২৭ জন ছাত্রছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন না করানোয় তারা মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড পায়নি।
সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ওই চারটি স্কুলকে মোটা টাকা জরিমানার পাশাপাশি মুচলেকা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। এএসএফএইচএম-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির অবশ্য প্রশ্ন, ‘আদালতের অর্ডারই কী বড় কথা! পর্ষদের মুচলেকা নেওয়ার নির্দেশের কোনও প্রয়োজন ছিল না। আমরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই সবাইকে বলছি, মুচলেকা দিয়ে দাও। কিন্তু পর্ষদ প্রধান শিক্ষকদের হৃদয় পাবে না।’
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির কৃষ্ণাংশু মিশ্রর বক্তব্য, ‘পর্ষদের মুচলেকার বয়ানেই আমাদের আপত্তি। স্কুল সব পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেও পারছে না। কারণ কোভিড-পরবর্তী পর্যায়ে অনেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে চলে যাচ্ছে।’
পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থরক্ষার জন্যেই পর্ষদের উদ্যোগ। যাতে কেউ কোনও জটিলতায় না পড়ে। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা পর্ষদের সম্মান রাখতে না পারলেও আদালত ও বিচারপতিদের সম্মানটুকু অন্তত রাখুন।’