Abhijit Ganguly : বেশি কথা নয়! যোগদানের পরে এল বার্তা
এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৪
এই সময়: আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে পা রেখেই মাইক হাতে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিতে বসেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে চাপা স্বরে বিরোধী দলনেতার সতর্কবার্তা, ‘কোনও প্রশ্ন নেবেন না।’ তার আগেই অবশ্য তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর লড়াই’-এর ডাক দিয়েছেন বিজেপির ‘রাজনৈতিক লাইন’ মেনে।এতদিন বিভিন্ন মামলার শুনানিতে তাঁর পর্যবেক্ষণগুলিই ছিল বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পরে কি তাঁকে ‘বেশি কথা’ বলতে দিতে চাইছেন না সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা? বৃহস্পতিবার দুপুরে সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান কর্মসূচি থেকে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন অভিজিৎ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাঁকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করতে চান। কিন্তু অভিজিতের ডান পাশে বসে থাকা শুভেন্দুকে কিঞ্চিৎ চাপা স্বরে প্রাক্তন বিচারপতির উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘কোনও প্রশ্ন নেবেন না।’ বিধানসভার বিরোধী দলনেতার সেই ‘রায়’ মেনেও নেন প্রাক্তন বিচারপতি। নন্দীগ্রামের বিধায়কের পরামর্শমতো সাংবাদিকদের আর কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি অভিজিৎ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাকে মার্জনা করবেন। আজ আর কোনও প্রশ্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে শুভেন্দুর ‘বার্তা’ পাওয়ার আগেই অভিজিৎ এদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর লড়াই’-এর ডাক দেন। এ বারের লোকসভা ভোটেই তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাত করার কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। তা সত্ত্বেও কেন অভিজিৎকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে দিলেন না শুভেন্দু, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের ব্যাখ্যা, মঙ্গলবার সল্টলেকে নিজের বাড়িতে অভিজিৎ যে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, সেখানে নারদ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্ব। নারদ মামলায় অভিজিৎ কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে দিয়েছিলেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের। সেদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নারদ-যোগের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
জবাবে প্রাক্তন বিচারপতি বলেছিলেন, ‘শুভেন্দুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছিল।’ সেই সূত্র ধরে সাংবাদিকরা তাঁর কাছে জানতে চান, তা হলে নারদ স্টিং অপারেশনে টাকা নিতে দেখা যাওয়া অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কে কী বলবেন? প্রাক্তন বিচারপতির সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘তাঁরাও চক্রান্তের শিকার।’ তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে বিজেপির ‘রাজনৈতিক লাইন’-এর ফারাক বিস্তর। কারণ, গেরুয়া নেতারা সুযোগ পেলে নারদ ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেন এখনও। দলে যোগ দেওয়ার আগে অভিজিৎই তাঁদের সেই অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়েছেন বলে বিজেপির একাংশের দাবি।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এদিনও চায়নি বিজেপি। সে কারণেই অভিজিৎকে ‘কোনও প্রশ্ন নেবেন না’-র বার্তা ভরা সাংবাদিক বৈঠকেই শুভেন্দু দিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষণ গেরুয়া শিবিরের একাংশের। রাজ্য বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘আমাদের পার্টিতে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য দলীয় মুখপাত্ররা আছেন। তা ছাড়া সার্বিকভাবে যে কোনও বিষয় নিয়ে রাজ্য সভাপতি এবং বিরোধী দলনেতা টিপ্পনি করতেই পারেন। কিন্তু দল সবাইকে সব বিষয়ে মন্তব্য করার এক্তিয়ার দেয়নি। এটাই পার্টির শৃঙ্খলা। সাংসদ-বিধায়করা নিজের এলাকা সম্পর্কে কিছু বলতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে দলে যোগ দিয়েই কেউ মনে যা আসছে, সব বলতে শুরু করবেন, এটা হতে পারে না।’
বঙ্গ-বিজেপির এক বিধায়কের কথায়, ‘এই তো সবে দলে এলেন ওই প্রাক্তন বিচারপতি। ক’টা দিন সবুর করুন। প্রার্থী হওয়ার পর কথা বলার অনেক সুযোগ পাবেন। আপাতত তিনি ক’দিন দলের প্রবীণ নেতাদের কাছ থেকে রাজনীতির ট্রেনিং নিন।’ এদিন দুপুরে সল্টলেকের রাজ্য বিজেপি দপ্তরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মদুমদার, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। প্রাক্তন বিচারপতির হাতে পদ্ম-পতাকা তুলে দিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘অভিজিৎবাবু বিচারপতি থাকাকালীন ন্যায়ের জন্য লড়াই করেছেন। ভবিষ্যতেও মানুষের মনে তিনি বিচারপতি হিসেবে থাকবেন।’ শুভেন্দুর কথায়, ‘বাংলার প্রতিবাদী মুখ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপিতে স্বাগত।’