নয়াদিল্লি: কিছুদিন আগেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে ভারত বদ্ধপরিকর। তবে সীমান্তে শান্তি থাকাকালীনও ভারতীয় সেনাকে যে যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে, তা বুঝিয়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। চিন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষিতে রাজনাথের এই বার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।বুধবার মিডিয়া আয়োজিত ‘ডিফেন্স সামিট’-এ রাজনাথের কড়া বার্তা, ‘আকাশপথ, ভূমি বা জলপথ— যে কোনও দিক থেকে কেউ যদি ভারতকে আক্রমণ করে, আমাদের সেনা মুখের মতো জবাব দেবে। আমরা কখনও কোনও দেশকে আক্রমণ করিনি, কারও এক ইঞ্চি জমিও দখল করিনি। কিন্তু কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে, আমরা মুখের মতো জবাব দিতে প্রস্তুত।’
লাদাখ সীমান্ত থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বের সীমান্ত, চিনের সঙ্গে ভারতের মিলিটারি স্ট্যান্ড-অফ লেগেই রয়েছে। গত চার বছর ধরে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বেশ কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে চিনের সঙ্গে সামরিক পর্যায়ের আলোচনা চালাচ্ছে ভারত, কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি। অক্টোবরে চুশুলে দু’পক্ষের কোর কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাধিক স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট থেকে চিন সেনা সরায়নি বলে অভিযোগ।
গত সপ্তাহে দিল্লির একটি ইভেন্টে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ভারত এবং চিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে গেলে বেজিংকে সীমান্ত চুক্তি মেনে চলতে হবে। বেজিংয়ের তরফ থেকে অবশ্য কোনও বার্তা আসেনি। এদিকে, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েও বহুদিন থেকে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিচ্ছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজনাথের এই যুদ্ধ প্রস্তুতির বার্তা।
তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এটাও বলেন, ‘ইন্দো-চিন সম্পর্ক এখন খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেলেও ভারত ভালো সম্পর্কই প্রত্যাশা করে। গলওয়ানের স্ট্যান্ডঅফের সময়ে আমাদের সেনা যে সাহস দেখিয়েছে, তা অসাধারণ। আমরা আর দুর্বল দেশ নেই। এখন ভারতকে কেউ রক্তচক্ষু দেখিয়ে পার পেয়ে যেতে পারবে না।’
ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বিরোধীদের বিঁধতেও ছাড়েননি রাজনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আত্মনির্ভরতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা মেক-ইন-ইন্ডিয়া এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আধুনিকীকরণের উপর জোর দিয়েছি। আমি বলছি না, আগের সরকার প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু আমাদের মতো আত্মনির্ভরতা আনতে পারেনি তারা।’