• Aadhaar Voter Link: আধার-ভোটার সংযুক্তিকরণ না থাকলে ভোট দিতে পারবেন না? কী জানাচ্ছে কেন্দ্র?
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৪
  • আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আপত্তি। পুরো বিষয়টি সম্মতি নির্ভর হওয়া উচিত বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন। সেই মর্মে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক কমিশনের আইন সংশোধনের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন বলে খবর। যেহেতু তেমন কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট তাই সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে আইন মন্ত্রক জানিয়েছে, 'আইন পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই, নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যাই যথেষ্ট।'

    কমিশনরে প্রস্তাব খারিজ করে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সাফাই দিতে হবে। নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানাতে হবে, আধারের তথ্য় প্রদান করবেন নাকি করবেন না তা সম্পূর্ণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আধার কার্ডের তথ্য না দিলেও কারও নাম বাদ যাবে না ভোটার তালিকা থেকে। ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে যে আধার কার্ডের তথ্যই দিতে হবে বাধ্যতামূলক নয় এমনটাও।

    বহু বছর ধরেই বিতর্ক চলছে আধার ও ভোটারের সংযুক্তিকরণ ও ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে আধার কার্ডের তথ্য প্রদানের বিষয়টি নিয়ে। সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে একটি মামলাও জামা পড়ে সম্প্রতি। সেই মামলায় আবেদনকারী জানিয়েছিলেন, ভোটার কার্ডে নাম তোলার যে ফর্ম ৬ ও ভোটার তালিকায় নাম থাকা নাগরিকদের আধার তথ্য সংযুক্তির জন্য যে ফর্ম ৬বি রয়েছে ও আরও বেশ কিছু ফর্মে আধার তথ্য না দেওয়া বা নিজের মতামত জানানোর কোনও উপায় নেই। ফর্মে শুধুমাত্র 'আধার কার্ডের নম্বর লেখার'-ই জায়গা রয়েছে ও 'আধার নেই' বলে জানানোর জায়গা রয়েছে ফর্মে। সেক্ষেত্রে আধার কার্ডের তথ্য় উল্লেখ করতে যাঁদের আপত্তি রয়েছে ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে তাঁদের 'আধার নেই' বলেই মিথ্যে কথা লিখতে হয়। বিষয়টি ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে কমিশন প্রশ্নের মুখে পড়ে। তারা জানায়, ভোটার কার্ডের জন্য মোটেও বাধ্যতামূলক নয় আধার কার্ড। সেই মর্মে সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি ভোটার কার্ডের আবেদনপত্রে সংশোধনের বিষয়টিও আদালত দেখতে বলে কমিশনকে। আদালতের সেই নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন ঘটানোর প্রস্তাব নিয়ে কমিশন কেন্দ্রের কাছে যায়। কিন্তু এদিকে আবার আইন সংশোধনে রাজি নয় কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আবার আদালত অবমাননার মামলাও হয় সুপ্রিম কোর্টে। আবেদনকারী অভিযোগ, নির্দেশ সত্ত্বেও ভোটার কার্ডের আবেদনপত্রে সংশোধন করা হয়নি। যদিও আদালতে সেই মামলা গৃহীত হয়নি। কারণ কমিশন এর মধ্যে জানায়, এই বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে।

    মাস দুয়েক আগে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের তরফে। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ২৩(৬), ২৮(২) (hhhb) ধারায় সংশোধনের আর্জি জানানো হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, আধার কার্ডের জন্য বাতিল করা যাবে না ভোটার কার্ড। কিন্তু কেন আধার তথ্য় নেই, তার যথেষ্ট কার নাগরিকককে দেখাতে হবে। কমিশন এই 'যথেষ্ট কারণ' শব্দ দু'টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। একই ভাবে ফর্ম ৬ নিয়ে ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলার ক্ষেত্রে আধার তথ্যের জায়গাটি বাদ দেওয়ার জন্য কমিশন সুপারিশ জানায় যাতে কাউকে আধার নিয়ে মিথ্যে বলতে না হয়। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেন্দ্র।

    ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আধার ও ভোটার সংযুক্তিকরণে কমিশন উদ্যোগী হয়। তবে সেই বছর অগাস্ট মাসে স্থগিত হয়ে যায় গোটা প্রক্রিয়া। কারণ শীর্ষ আদালত আধার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এলপিজি, কেরোসিন এবং পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে। তবে তত দিনে দেশের ৩৮ কোটির নাগরিকের আধার ও ভোটার সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, গোপনীয়তা রক্ষা যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তবে কোনও আইন যদি আধার তথ্য সংগ্রহকে বৈধতা দিয়ে থাকে ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের স্বার্থ সেক্ষেত্রে রাশ টানা আয় গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে আধার তথ্য় ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় সাফাই অভিযান চালানোর আবেদন জানায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন ঘটানোর বিল পাশ করে। এরপর ফর্ম ৬বি-এর মাধ্যমে কমিশন আধার তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে। কেউ না চাইলে এই ফর্মে আধার তথ্য উল্লেখ নাও করতে পারে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কমিশন সংগ্রহ করেছে ৬৬ কোটি ২৩ লাখ মানুষের আধার তথ্য। এই পরিসংখ্য়ান দেশের মোট ভোটদাতাদের ৯৬.৯৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আধার ও ভোটার সংযুক্তিকরণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)