• অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, গয়না বন্ধক রেখে পড়াশোনা, হুগলির আসমাতারা আজ লোকো পাইলট
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৪
  • ছোট থেকে লক্ষ্য ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন হুগলির দাদপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে আসমাতারা খাতুন। বর্তমানে এই কন্যাই এখন খড়গপুর ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকোপাইলটের কাজ করছেন। তাঁর জন্য গর্বিত গোটা গ্রাম।মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ছোট থেকেই প্রতিজ্ঞ ছিলেন আসমাতারার বাবা-মা। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু, অভাবের সংসারে মেয়ের পড়াশোনার কোনও ক্ষতি বা খামতি তাঁরা হতে দেননি। ছোট থেকেই মেধাবী আসমাতারা। রসুলপুর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ভর্তি হন মহেশ্বরপুর হাইস্কুলে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ধনিয়াখালি মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর দুর্গাপুরে বেঙ্গল কলেজে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন।

    এরপরেও নিজের লক্ষ্য়ে অবিচল ছিলেন তিনি। মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে গিয়েছেন মা নুরজাহান বেগম ও বাবা জাকির হোসেন। বাবার সামান্য দুই বিঘা জমি। চাষাবাদ করে যা উপার্জন হতো তা নিয়েই তিন সন্তানকে নিয়ে চলত তাঁদের পরিবার। আসমাতারা পরিবারের বড় সন্তান। মেয়ে মেধাবী হলেও পড়াশোনার খরচ চালাতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছিল পরিবারের।

    অভাবের সংসারে সেভাবে ভালো কোচিং সেন্টারে মেয়েকে দিতে পারেননি বাবা-মা। তাই ইউ টিউব দেখে অনলাইনেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন আসমাতারা। ব্যাঙ্কের চাকরির ক্ষেত্রে অনেকবার বিফল হয়েছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করে চাকরি পাওয়া অপেক্ষাকৃত সময়সাপেক্ষ। তাই মায়ের ইচ্ছে মেনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

    নিজের সোনার গয়না বিক্রি করে তিনি মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগান। শুধু তাই নয়, গবাদিপশুর দুধ বিক্রি করেও মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছে তাঁরা। আসমাতারা জানান, তাঁর লক্ষ্য ছিল সরকারি চাকরি। সেই মতো পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেও পাননি। আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবুও ভেঙে পড়িনি। ফের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এরপর কলকাতায় চলে আসেন তিনি। ব্যাঙ্কিং পরীক্ষাগুলির জন্য নিতে শুরু করেন প্রস্তুতিও। পরে রেলের চাকরির জন্য যোগাযোগ করেন।

    বর্তমানে রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকোপাইলট হিসেবে যোগদান করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই কন্য়াকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রতিবেশীদের থেকে শুনতে হয়েছে অনেক কথাও। কিন্তু, নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তিনি। নিজের সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান দেখছেন আসমাতারা। তিনি জানান, ক্লাস নাইন পর্যন্ত মায়ের কাছেই পড়াশোনা শিখেছেন তিনি। নারী দিবসে তাঁর বার্তা, সকলকে লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

    এদিকে মেয়ের সাফল্যে অশ্রুসিক্ত মায়ের চোখ। তিনি বলেন, 'মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। সামান্য দুই বিঘা জমি ছিল। তার উপর ভিত্তি করেই গোটা সংসার টানা, মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানো সব করতে হয়।’ বিয়েতে যে গয়না পেয়েছিলেন তা বন্ধক গিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। তবে তাঁর কোনও দুঃখ নেই। মেয়ে সংসারের হাল ধরেছে।

    বাবা জাকির হোসেন বলেন, ' মেয়েকে মানুষ করতে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। ছোট থেকে মেয়ে ছিল মেধাবী। প্রতিটা বাবা-মাকে বলব জীবনে ঝড়ঝাপটা যাই আসবে সেটাকে সহ্য করে মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহায্য করতে হবে।'
  • Link to this news (এই সময়)