বাকস্বাধীনতা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের সমালোচনা করে কেউ মতপ্রকাশ করলে, সেটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না বলে একটি মামলায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের মতে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আর সেটা সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে।প্রকৃত ঘটনাটি কী?
ঘটনার সূ্ত্রপাত ২০২২ সালে। মহারাষ্ট্রের একটি কলেজের অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ হামজা কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে হোয়াটসঅ্যাপে একটি স্টেটাস দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে একটি কালো দিন বলে অভিহিত করেছিলেন।
ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জানিয়েছিলেন শুভেচ্ছা। এরপরেই কলেজের ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ ধারার অধীনে জাভেদ আহমেদ হামজা বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়।
২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল এফআইআর বাতিলের জন্য বোম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অধ্যাপকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল উচ্চ আদালত। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ওই অধ্যাপক।
পর্যবেক্ষণে কী জানিয়েছে আদালত?
৭ মার্চ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি হয়েছিল বিচারপতি এএস ওকা নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে। পর্যবেক্ষণে বেঞ্চ জানিয়েছে, সংবিধানের ৯১(১)(এ) অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অধিকার অনুসারে, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার থেকে শুরু করে সরকারের যে কোনও সিদ্ধান্তের সমালোচনা বা সমর্থনের অধিকার রয়েছে দেশের নাগরিকের।
বেঞ্চের মতে, সরকারের সমালোচনা করা কখনই অপরাধ নয়। এটা গণতন্ত্রের একটি ভিত্তি। এখানেই থেমে থাকেনি বিচারপতি এএস ওকা নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে। পুলিশ প্রশাসনের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দুই বিচারপতি। পুলিশ প্রশাসনকে আরও শিক্ষিত হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে পুলিশের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত বলেও মনে করছেন বিচারপতিরা।
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতেই ৫ অগস্ট দিনটিকে কালো দিন বলে অভিহিত করেছিলেন আবেদকারী। আর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পাকিস্তানকে শুভেচ্ছা জানানো, সৌজন্যের মধ্যে পড়ে বলে মনে করছে বিচাপতি এএস ওকা নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে।