• রুপোলি জগৎ থেকে পরিপক্ক রাজনীতিক! ভোটের মাঠে নামার আগেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন শতাব্দী?
    এই সময় | ০৮ মার্চ ২০২৪
  • ‘মাস্টারমশাই আপনি কিছু দেখেননি!’ একটি সংলাপ বাংলা সিনেমার চিত্রনাট্যের ইতিহাসে দাগ কেটে গিয়েছিল। সামাজিক অপরাধের দমবন্ধ করা গল্প নিয়ে ‘আতঙ্ক’ সিনেমা তৈরি করে মাইল ফলক। সেই সিনেমা থেকে রুপোলি পর্দায় পা রেখেছিলেন তিনি। ‘পাশের বাড়ি মেয়ে’র মতো লুকস তাঁকে সিনে জগতে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তোলে। অভিনয় প্রতিভায় আট নয়ের দশকে বাংলার প্রথম সারির নায়িকা ওঠেন শতাব্দী রায়। কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে।তাঁর সমসাময়িক দেবশ্রী রায় বা সিনিয়র মুনমুন সেন, কিন্তু রাজনীতিতে এসে লম্বা ইনিংস খেলে যেতে পারেননি। ২০০৯ সাল থেকে রাজনীতির ময়দানে ব্যাট করে যাচ্ছেন শতাব্দী। লাল মাটির দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলার এ মাথা থেকে ও মাথা। চিত্র জগতের অনেকেই এক-দুবার টিকিট পাওয়ার পর অনেকটাই থিতিয়ে যান। এক্ষেত্রে উল্টো! রাজনীতিতে নবাগতা শতাব্দীর ঝাঁঝ কিন্তু এখন অনেকটাই বেশি। সাংগঠনিক পক্বতাও নেহাত কম নয়।

    সিনে জগৎ থেকে রাজনীতি

    বাংলা সিনেমায় তাপস-শতাব্দী জুটি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তো প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার সঙ্গে। সেই তাপস পাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহচর হয়েছিলেন অনেক আগেই। শতাব্দী এসেছিলেন কিছুটা দেরিতে। তবে, দেরিতে এলেও নেত্রীর উত্থানে ভাটা পড়েনি। বরং, বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল, বিকাশ রায় চৌধুরীদের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকদের সঙ্গে পা মেলাতে দেরি করেননি। সিপিএমের একচেটিয়া আধিপত্যের মধ্যেও বীরভূম লোকসভা আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দেন পালাবদলের আগেই। উত্থানের শুরু সেই থেকেই।

    জনসভায় শতাব্দী রায়

    চিত্র তারকার জয়ের হ্যাটট্রিক

    তৃণমূলের কোর টিমে জায়গা পান ২০০৯ সালে। সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছয় বারের সাংসদ রাম চন্দ্র ডোম সেবারের লোকসভায় দাঁড়াননি। সিপিএমের প্রার্থী ব্রজ মুখোপাধ্যায়কে হেলায় উড়িয়ে দেন শতাব্দী। জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৬৫ হাজার। এরপর থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিবার একটু একটি করে ব্যবধান বাড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন।

    TMC MP Satabdi Roy : লোকসভায় বীরভূমের জন্যে দাবি তুলতেই কটাক্ষের শিকার শতাব্দী রায়

    বিতর্ক পিছু ছাড়েনি

    সিনে জগতে তাঁর দিকে কেউ বিতর্কের আঙুল তুলতে পারেনি। তবে, রাজনীতিতে মাঠে কাদা তো থাকবেই। সেই কাদার কয়েক ফোঁটা গায়েও ছিটকে আসতে বাধ্য। বীরভূমের তৃণমূল সাংসদের বেলাতেও অন্যথা হয়নি।

    যার শুরুটা হয়েছিল বীরভূম থেকেই। এলাকায় শের তো একটাই হয়। বীরভূমের মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বাঘ’ ছিল অনুব্রত মণ্ডল, এমনটাই দাবি তৃণমূল নেতাদের। মেঠো রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে তথাকথিত গ্ল্যামারাস মিষ্টভাসী নেত্রীর ঠোকাঠুকি তো লাগারই কথা। হয়েও ছিল সেটা। ২০১৮ সালের পরে শতাব্দীর মুখে শোনা যায় ‘অনুব্রত বিরোধী’ বচন। ‘কুকথাতেই অনুব্রত মণ্ডল স্টার হয়ে উঠেছেন’ প্রকাশ্যে আগুনে ঘি ঢেলে দেন সাংসদ। তবে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে কী ভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, সেটাও শিখে নিতে সময় নেননি। ভোট প্রচারে গিয়ে ‘আমাকে বিনা পয়সায় দেখতে চাইলে ভোট দিন’ এর মন্তব্য বিরোধীদের হাতে লোফা ক্যাচ তুলে দিয়েছিল। কিন্তু, তাঁকে ভোটের ময়দানে হারানো সম্ভব হয়নি।

    গত বছরই জনসংযোগ রক্ষার্থে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি শুরু করে তৃণমূল। সেখানে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে, তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে জনসংযোগের কথা ছিল বিধায়ক, সাংসদদের। বিষ্ণুপুর এলাকার তেঁতুলিয়ায় এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে খাওয়ায় সামনে নিয়ে ছবি তুলে তিনি উঠে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পরে যদিও সেটার ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

    তাঁর হাসিমুখ ঘুম উড়িয়ে দিত তরুণ সমাজকে। তখন তিনি নায়িকা। কিন্তু, রাজনীতিতে সর্বক্ষণের হাসিমুখ বিপদ ডেকে আনতে পারে। দলের অনুশাসন বজায় রাখতে মিঠে-কড়া বুলি না আওড়ালে পিছিয়ে পড়তেই হয়। সেরকমই এক উদাহরণ দেখা গিয়েছে এবারের লোকসভা নির্বাচনের কয়েকদিন মাস আগেই। দলীয় বৈঠকে বুথ সভাপতিদের একহাত নিতে কার্পণ্য বোধ করেননি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করলে চলবে না। তৃণমূল স্তরে খেটে কাজ করতে হবে। নচেৎ, পাশা ওল্টাতে সময় লাগবে না। আবার রাজনীতির যে শিষ্টাচারও প্রয়োজন সেটাও খেয়াল থাকে সাংসদের। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ থাকাকালীন তাঁকেই বলতে শোনা যায়, ‘রাজনীতিতে কিছু ভাল মানুষ যদি থাকেন, তাহলে উনি একজন।’ সব মিলিয়ে পর্দার রঙের থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নানা রংয়ের ঘটনাপ্রবাহের অভাব নেই, এ কথা বলাই বাহুল্য। এবারেও কি সেই ধারা বজায় থাকবে? এবারের লোকসভায় কি একই ধারা বজায় থাকবে, রইল জল্পনা।
  • Link to this news (এই সময়)