বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক তছরুপে মূল অভিযুক্ত ভক্ত মণ্ডলের খোঁজ পাচ্ছে না পুলিশ। অথচ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে তাঁকে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি। কখনও আইনজীবীর চেম্বারে, কোনও দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডেন জুবিলি বিল্ডিংয়ের বিপরীতে নার্স কোয়ার্টারের পাশে চায়ের দোকানে তাঁর দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।এমনকী শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় হস্টেলের এক কর্মী ভক্ত মণ্ডলকে বাঁকুড়া মোড় এলাকায় দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সবাই দেখতে পেলেও ভক্তর দেখা পুলিশ কেন পাচ্ছে না? নাকি এই ঘটনার তদন্তে সে ভাবে মাথা ঘামাতে চাইছে না পুলিশ? জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশ সব দিক থেকে ভক্ত মণ্ডলের খোঁজ চালাচ্ছে। একটু দেরি হলেও নিশ্চিত ধরা পড়বেন ভক্ত।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিক্সড ডিপোজিট তছরুপে নাম জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের কর্মী ভক্তর। বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে বলে দাবি। গত মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি ইউকো ব্যাঙ্কের সিনিয়র ম্যানেজার নেহারানি লিখিত ভাবে ভক্ত মণ্ডল ও শেখ এনামুল হকের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ভক্তের নামে অভিযোগ জানান।
কিন্তু, তার পর ২৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ভক্তের সন্ধান পেতে ব্যর্থ বর্ধমান থানার পুলিশ। তবে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে শেখ এনামুল হককে। তাঁকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালালেও তাৎপর্যপূর্ণ কোনও তথ্য সামনে আসেনি বলে সূত্রের খবর। বরং পুলিশের ধারণা, দাবার বোড়ে হিসেবে ভক্ত মণ্ডল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক এনামুলকে ব্যবহার করেছেন। ফলে পুলিশের একাংশ চাইছে, এই কেসের রহস্য উদঘাটনে ভক্ত মণ্ডলকে জেরা করা দরকার। কিন্তু সেটাই হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অদ্ভুত ভাবে নীরব পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষ বলেন, '২৭ দিন পরেও পুলিশ ভক্ত মণ্ডলের দেখা পায় না। তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গেলে দেখবেন, ভক্তকে ভক্তিভরে খুঁজে নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছে পুলিশ। আসলে এর পিছনে বহু রাঘববোয়াল জড়িয়ে। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা হচ্ছে। দেখবেন তখন সবাইকে খুঁজে পাওয়া যাবে।'
ফিন্যান্স বিভাগের কর্মী ভক্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যোগসাজশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর আমানত ভাঙিয়ে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করিয়েছিলেন। ভক্তর বিজেপি যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে খণ্ডঘোষের বিজেপি প্রার্থী বিজন মণ্ডল ও বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার তৎকলীন সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন ভক্ত।
সম্প্রতি অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলি বিল্ডিংয়ের ফিন্যান্স বিভাগে পুজো হয়েছিল। সেই পুজোর মূল হোতা ভক্ত মণ্ডল বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই। ফিন্যান্স বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কর্মী-আধিকারিকদের উপর হম্বিতম্বি করতেন ভক্ত। কয়েকদিন পর কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নাকি ভক্ত অফিসে আসবেন, তাই তাঁর বসার জন্য বড় ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘ভক্ত মণ্ডলকে ধরা যাচ্ছে না, নাকি ধরা হচ্ছে না, সেটাই তো বড় প্রশ্ন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভাস্কর বলেন, ‘এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাতে পারলেন না কোষাগার থেকে মোট কত টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বিচারবিভাগীয় তদন্ত ছাড়া এর রহস্য সমধান সম্ভব নয়। এই আর্থিক তছরুপ নিয়ে আমরা উপাচার্যকেও বলেছি। ফের ডেপুটেশন দেবো আমরা। জানতে চাইব তদন্তের গতিপ্রকৃতি। পুলিশি তদন্তে কার্যত আমরা হতাশ।’
শাসকদলের ছাত্রনেতা খোন্দকার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। এখন পরীক্ষা চলছে বলে আমরা আন্দোলন করতে পারছি না। ভক্ত মণ্ডল হোক আর চৌধুরী হোক, কাউকেই ছাড়া হবে না। পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা অবস্থান বিক্ষোভে বসব।’