এই সময়: প্রথম দফায় ১৯৫ সিটে প্রার্থী ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হোঁচট খেতে হয়েছে। বিরোধীদের কটাক্ষ ও আক্রমণের মুখে লোকসভা ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পবন সিং এবং উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকির বিজেপি প্রার্থী উপেন্দ্র সিং রাওয়াত। গুজরাটের মেহসানা কেন্দ্রের প্রার্থী নীতিন প্যাটেলও নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। দ্বিতীয় দফায় লিস্ট বের করার আগে তাই আরও হোমওয়ার্ক করে নিতে চাইছেন অমিত শাহ-জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা।প্রথম দফায় বাংলার ২০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বাংলায় যে শুধু পবন সিংয়ে গেরুয়া শিবিরের পা কেটেছে, এমন নয়, বিড়ম্বনা বেড়েছে রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখানোয়। রানাঘাট কেন্দ্র থেকে টিকিট না পাওয়াই তাঁর দলবদলের কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক জন বারলাও। তাঁর বদলে এবার আলিপুরদুয়ার থেকে মনোজ টিগ্গাকে লড়াচ্ছে বিজেপি। ফের টিকিট না পেয়ে মনোজের বিরুদ্ধে কার্যত প্রকাশ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন বারলা। আরও কয়েকজন বিজেপি নেতা-বিধায়কও ফুল-বদল করতে পারেন বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির একাংশের দাবি, প্রার্থী ঘোষণার আগে হোমওয়ার্ক ঠিকভাবে করা থাকলে এই ঘটনাগুলি সহজেই এড়ানো যেত।
তৃণমূলে নাম লিখিয়েই মুকুটমণি রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। সূত্রের খবর, রানাঘাটে মুকুটমণির ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা-কর্মীরা শুক্রবার থেকেই জগন্নাথের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, এরকম ঘটনা যে ঘটতে পারে, সেটা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বেরই আঁচ করা উচিত ছিল। এবং সেইমতো বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভ প্রশমিত করার উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল।
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা কোনও রাখঢাক না করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপির নতুন প্রার্থী মনোজকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। তাঁর অনুগামীরা ইতিমধ্যেই 'নো ভোট টু মনোজ টিগ্গা' ডাক দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গায় বারলাকে বিজেপি প্রার্থী করার দাবিতে পোস্টার পড়েছে। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন 'ভারতীয় টি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন'-এর নেতা-কর্মীরাও শুক্রবার থেকে মনোজের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। যদিও মনোজের দাবি, বিটিডব্লিউইউ-এর নব্বই শতাংশ সদস্য তাঁর সঙ্গেই আছেন। দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না-করা হলেও সিটিং এমপি রাজু বিস্তাকে সরিয়ে প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন স্রিংলাকে দাঁড় করানো হতে পারে, এই আঁচ পেয়ে টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, বঙ্গ-বিজেপি নেতাদের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাবের জন্যই টিকিট সংক্রান্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসছে। তাই দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার আগে সতর্ক থাকতে চাইছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'এই ঘটনাগুলি কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। তবে আমাদের লক্ষ্য বিকশিত ভারত, শক্তিশালী অর্থনীতি। নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে সেই পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব। যাঁরা বিরোধীদের হাত শক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের কেউ মনে রাখবে না।'