স্ত্রীর প্রাক্তনের সেবা-যত্ন বর্তমানের! ভালোবাসার ত্রিকোণ সমীকরণে তাজ্জব বিশ্ব
এই সময় | ০৯ মার্চ ২০২৪
সম্পর্ক যেন আজকাল দিনে বড়ই ঠুনকো! ইট-কাঠ-পাথরের এদুনিয়ায় বহু বছরের সম্পর্ক ভাঙতে এক মুহূর্ত সময় লেগে। জেট গতিতে ছুটে চলা জীবনে বিশ্বাস-পাশে থাকা যেন ক্রমশ ফ্যাকাসে। কথায় বলে, সুখের সময় নয়-দুখের সময়, কঠিন মুহূর্তের সময় যে পাশে থাকে সেই আসল সঙ্গী। তবে আজকালকার দিনে এসব কথা যেন 'কথার কথা'-তে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে একাহিনি একেবারে ভিন্ন ধারার। ওঁদের দু'জনের কাহিনি জানলে মনে হবে সম্পর্ক-বিশ্বাস-পাশে থাকার সংজ্ঞার ১০০ শতাংশ সঠিক উত্তর দিয়েছেন। ওঁরা বদলে দিয়েছেন সম্পর্কের সমীকরণ। ওঁরা যেন প্রমাণ করেছেন, 'এভাবেও ভালোবাসা যায়-এভাবেও পাশে থাকা যায়।'প্রকৃত ভালোবাসার সংজ্ঞা এক এক মানুষের কাছে এক একরকম। মনের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে কত কিছুই করে না বিপরীত দিকের মানুষটা। কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও সেই মানুষটাকে কাছে পেতে মান-অভিমান ভুলে মেনে নেয় সব আবদার। মনুষত্ব সবকিছুর ঊর্ধ্বে ওঠাই উচিত। তাই প্রমাণ করলেন ব্যক্তি। 'ইগো' আর 'অভিমান'-কে পুষে রেখেই সামাজিক দায়বদ্ধতাও কখনও কখনও ভুলতে বসে মানুষ। তবে সেসবকে ভুল প্রমাণ করলেন ব্যক্তি। মনের মানুষের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন কয়েক বছর হল। তবে বিশেষ শর্তে। আর সেই শর্ত মাথা পেতে নিয়েছেন। ব্যক্তির কাহিনি জেনে চোখে জল এসে যাচ্ছে নেটিজেনদের। তাঁদের কথায়, 'ভালোবাসা হয়তো ঠিক এমনই হওয়া উচিত।'
স্কুল জীবন থেকে প্রেম। সেই প্রেম বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্তও গড়ায়। ২০০৬ সালে বিয়ে হয় ক্রিস আর্মস্ট্রং এবং ব্র্যান্ডল স্মিথের। ভালোয়-মন্দেই ঠিকঠাকই কাটছিল। তবে বিয়ের মাত্র দুই বছরের মাথাতেই ছন্দপতন। সুখ যেন সইল না! বড়সড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন ব্র্যান্ডল। গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক চোট লাগল মাথায়। তখন যেন সব দিক অন্ধকার ক্রিসের। কী করবেন কী করবেন না কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। স্বামীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে দৌড়লেন। তবে বিশেষ যে লাভ হল এমনটা নয়। প্রাণে বাঁচলেন বটে তবে জীবনটা আর স্বাভাবিক হল না। অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়েই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন, চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন স্পষ্ট। নিত্য় সঙ্গী হয়ে গেল হুইল চেয়ারটা।তখন জীবনের এক সন্ধিক্ষণের দাঁড়িয়ে ক্রিস। তবে স্বামীকে সুস্থ করতে তিনি মরিয়া। কোনও ভাবেই স্বামীর হাত তিনি ছাড়বেন না। আর এই পর্যায়ে শুরু হল জীবনের 'সেকেন্ড হাফ'। ক্রিসের জীবনে আসেন জেমস আর্মস্ট্রং। প্রেম নিবেদন করেন তাঁকে। বিয়ের প্রস্তাবও দেন। আর তখনই বিশেষ শর্ত দেন ক্রিস। জেমসকে স্পষ্ট জানান, বিয়ে তিনি করতে পারেন তবে প্রথম স্বামী তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন। তাঁদেরই জীবনের অংশ হয়ে থাকবেন বাকিটা জীবন। ক্রিসের সেই প্রস্তাবে একবাক্যে রাজি হয়ে যান জেমস। দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করেননি ক্রিসকে।
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস বলেন, 'আমার প্রথম স্বামী আমার জীবনের একটি অংশ। ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতেই পারি না। শর্ত দিয়েছিলাম দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর থেকে আলাদা থাকতে পারব না। জেমসকে আমি শর্ত দিয়েছিলাম ও যদি আমায় বিয়ে করতে চায় তাহলে ওকে বিষয়টা মেনে নিতে হবে। জেমস আমার জীবনের কাহিনি শুনে বিষয়টা মেনে নিয়েছিল নির্দিধায়। ও জানিয়েছিল আমার জীবন সংগ্রামের ও একজন অংশীদার হতে চায়।' ক্রিস জানিয়েছেন, তাঁর প্রথম স্বামীর যত্নের কোনও খামতি রাখেন না জেমস। নিজে হাতে খাইয়ে দেন। ঘুম পাড়িয়ে দেন।
না কোনও আক্ষেপ, খেদ কিছুই নেই জেমসের! হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন সবটা। বরং ক্রিসের জীবনের এক অংশ হতে পেরে হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন সবটা। জেমসের কথায়, 'ক্রিসের মতো ভালো মনের মানুষ আর নেই। ওর জীবনে যা ঘটেছে তা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওর জীবন সংগ্রামের একজন অংশীদার হব।' সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া সৌজন্যে সামনে এসেছে দম্পতির জীবনের এমন 'ট্রাজেডি'। জেমস-ক্রিসের এমন কাহিনি জেনে চোখের জল বাঁধ মানেনি নেটিজেনদের। সামান্য় টুকি-টাকি মনকষাকষি, সন্দেহের বশে দীর্ঘ বছরের সম্পর্ক যেখানে এক লহমায় ভেঙে চুরমার হয়ে সেখানে যেন সম্পর্কের সমীকরণের এক অন্য বুনট বুনছেন জেমস-ক্রিস। তাঁরা যেন দৃষ্টান্ত। সম্পর্ক -ভালোবাসার অর্থ তাঁদের কাছে কঠিন সময়ের একে অপরের হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরা-ছেড়ে দেওয়া নয়।