Rabindra Sarobar Lake : ভরসা শুধু বৃষ্টির জল, সঙ্কটে রবীন্দ্র সরোবর
এই সময় | ০৯ মার্চ ২০২৪
কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
‘প্রদোষ মিত্র? আপনি কি সাঁতারু? ইংলিশ চ্যানেল?’ ‘ঢাকুরিয়া লেক।’ফেলুদা আর লালমোহনবাবুর আলোচনায় জায়গা পেয়েছিল ঢাকুরিয়া লেক ওরফে রবীন্দ্র সরোবর। প্রথম দু’জন অমরত্ব পেয়েছেন বাঙালির কাছে। কিন্তু আপাতত অস্তিত্বসঙ্কটে ঢাকুরিয়া লেক। এ বছর গরম বাড়লে লেকে রোয়িংয়ের প্রশিক্ষণ আদৌ করানো যাবে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।
পাড় থেকে অনেকটা গভীর পর্যন্ত এলাকা শুকিয়ে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল ‘হাড়-কঙ্কাল’। যেটুকু জল রয়েছে, তার গভীরতাও যে দু’-আড়াই হাতের বেশি নয়, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। একবছর আগে শহরের মাঝখানে থাকা একমাত্র এই জলাশয়ের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে শিউরে উঠেছিল কলকাতা। কিন্তু ওই একবারেই শেষ নয়।
২০২৩-এর পর ২০২৪-এ ফের তেমনই অবস্থা হতে চলেছে রবীন্দ্র সরোবরের — এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশবিদদের একটা বড় অংশের।
কয়েক মাস আগে জমাটি অনুষ্ঠান করে ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপন করেছিলেন ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের সদস্যরা। শুধু কলকাতা নয়, গোটা পূর্ব ভারতে রোয়িং শেখার যে ক’টি সংগঠন রয়েছে তার মধ্যে ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের স্থান অত্যন্ত উপরে।
গত কয়েক বছর ধরে গরম পড়লেই লেকের এমন করুণ অবস্থা প্রসঙ্গে ক্লাবের পক্ষ থেকে চন্দন রায়চৌধুরী বলছেন, ‘আমি গত ২২ বছর ধরে ক্লাবের অনারারি সেক্রেটারি। গরমে লেকের জল শুকিয়ে যাচ্ছে, এমন ঘটনা আমাদের নজর এড়ায়নি। কিন্তু গত সিজ়নে যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি, তেমন কখনও হয়নি। আশা করব এ বছর তেমন হবে না।’
আলিপুর হাওয়া অফিসের রিপোর্ট বলছে, ২০২২-এর ২৪ অক্টোবরের পর শহরে বৃষ্টি হয়েছিল ২০২৩-এর ১৭ মার্চ — ১৪১ দিন পর। পাঁচ মাসের কাছাকাছি বৃষ্টির অভাবে ধুঁকতে থাকা শহরের ভৌম জলস্তর দ্রুত কমে এসেছিল। তারই প্রভাবে নাকি ঢাকুরিয়া লেকের এমন দুরবস্থা।
লেকের অবস্থা কতটা খারাপ? পরিবেশকর্মী সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলছেন, ‘এখন লেকের একেবারে ধারের দিকের অর্থাৎ যাকে আমরা লেক এজ বলি সেই অঞ্চলে জলের গভীরতা ৩ ফিট। লেকের ঠিক মাঝখানের জলস্তর ৭ ফিট গভীর। জাতীয় সরোবরের ক্ষেত্রে জলাশয়ের মাঝখানের জলস্তর অন্তত ১৫ ফিট গভীর হওয়া প্রয়োজন। রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় সরোবর বা ন্যাশনাল লেকের স্টেটাস পায়। সুতরাং প্রয়োজনীয় জলস্তরের অর্ধেকেরও কম রয়েছে এখানে।’
পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘এ বছর এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ঢাকুরিয়া লেকের জন্য দ্রুত ন্যাশনাল লেক কনজ়ারভেশন প্ল্যান প্রয়োগ করা না হয় তা হলে অশেষ দুর্গতি রয়েছে।’
লেকের অবস্থা এমন কেন, তার জবাব দিতে গিয়ে জিয়োমর্ফোলজিস্ট সুজীব কর বলছেন, ‘অতীতে লেকের সঙ্গে আদিগঙ্গার যোগ ছিল। কাজেই জলের জোগানে সমস্যা ছিল না। পরে কলকাতা মেট্রোর কাজের জন্য সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন এখানে জলের একমাত্র জোগান আসে বৃষ্টি থেকে। সুতরাং বৃষ্টি না হলে যে লেক শুকিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই।’
প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনও ভাবেই ঢাকুরিয়া লেককে রক্ষা করা যাবে না এমনটা জানিয়ে পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, ‘প্রথমে প্রয়োজন ওই এলাকার এনভায়রনমেন্ট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট করা। লেক ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোটা অঞ্চলটার জীববৈচিত্র্য কী ভাবে প্রভাবিত হবে সেটা বুঝতে হবে।
তবে, ওই এলাকায় নিয়মিত অজস্র পাম্প চালিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়া হয়। সবথেকে আগে এই ব্যাপারটায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এলাকার ভূগর্ভস্থ জলস্তর সঙ্কুচিত হতে থাকলে কিন্তু বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস নামার আশঙ্কা খুব বেশি।’