স্বামী অসুস্থ, দুই ছেলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। বাধ্য হয়েই সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয় বারুইপুরের সীতাকুন্ডুর বাসিন্দা সাহিদা বিবিকে। প্রায় ১৪ বছর আগে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের কাছে মশলা মুড়ি বিক্রি শুরু করেন তিনি। একটি ভ্যানে পসরা সাজিয়ে নিজেই সেই ভ্যান চালিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রোজ হাসপাতালের সামনে এসে বসেন বছর ষাটের সাহিদা। দিনভর মুড়ি বিক্রি করে সন্ধ্যায় ফেরেন বাড়ি।সম্প্রতি বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায় সাহিদার সেই ভ্যানটি। কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয় বিক্রি-বাটা। এদিকে নতুন করে ভ্যান কেনার ইচ্ছা থাকলেও নিরুপায় ছিলেন সাহিদা। এই দিকে মুড়ি বিক্রি না করলে অসুস্থ স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালানো দায়।
বাধ্য হয়ে পাড়ার এক ব্যক্তির থেকে দৈনিক পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে একটি ভ্যান ভাড়া করেন মহিলা। সেই ভ্যান নিয়েই গত কয়েকদিন কাজ চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি সেই খবর জানতে পারে বারুইপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরাই সাহিদার জন্য নতুন ভ্যানের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হন। ঘটনার কথা শুনে এগিয়ে আসেন শিশু চিকিৎসক আব্দুল হাবিব।
তিনিই নতুন ভ্যানের জন্য অর্থ সাহায্য করেন। শুক্রবার, নারী দিবসের দিন চিকিৎসক-সহ সংগঠনের সদস্যরা হাসপাতালের কাছে সাহিদার দোকানে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন নতুন ভ্যানটি।
নতুন ভ্যান পেয়ে উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেননি সাহিদা। তিনি বলেন, 'স্বামী, দুই ছেলে অসুস্থ। আমি কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই রোজ ভ্যান চালিয়ে এসে দোকান দিই। ভ্যানটা চুরি হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। এ ভাবে নতুন ভ্যান মিলবে ভাবতে পারিনি।'
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে বিমান দত্ত বলেন, 'দৈনিক ভাড়া দিয়ে একজনের থেকে ভ্যান নিয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন। সামান্য আয়ের অনেকটাই ভাড়া দিতে চলে যেত। সেই কারণেই চেয়েছিলাম ওর পাশে দাঁড়িয়ে অন্তত একটা পুরনো ভ্যানের ব্যবস্থা করতে। ডাক্তারবাবুর সহযোগিতায় আমরা নতুন ভ্যান তুলে দিতে পেরেছি।'
হাবিব বলেন, 'এই বয়সেও মহিলা যেভাবে সংসার চালাতে লড়াই করছেন, ভাবা যায় না। ওঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত।’ তিনি আরও জানান, সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সাহিদার পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন। এরপরেই তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। সবমিলিয়ে হাসি ফুটেছে সাহিদা ও তাঁর পরিবারের ঠোঁটে।