অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রামবন্দি জীবনে কাজ বলতে খাওয়া, ঘুম, মাঝেমধ্যে হাঁটাহাঁটি। কিন্তু এই বন্দিদের সামান্য প্রশিক্ষণ দিতে পারলেও তাঁদের হাতের কাজ তাক লাগিয়ে দিতে পারে। এতে তাঁদের বোরডম কাটার পাশাপাশি সৃজনশীলতা বাড়ে, হাতে আসে দু-পয়সাও। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বন্দিরা বন্ডের সামান্য কিছু টাকা জোগাড় করতে না পারায় জামিন পেয়েও দিনের পর দিন সংশোধনাগারে থেকে যেতে বাধ্য হন।
এ বার মহিলা বন্দিদের সেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এলেন ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। এ বার জেলবন্দি মহিলাদের হস্তশিল্পের জিনিস পাওয়া যাবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন আউটলেটে। যার ফলে জেলবন্দি মহিলারা স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও বিকাশ ঘটবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারে বন্দি মহিলাদের জন্য এমনই ব্যবস্থার আয়োজন করলেন ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারে ৯ জন মহিলা বন্দি রয়েছেন। বধূ নির্যাতন, খুন থেকে শুরু করে পকসো, এনডিপিএস মামলায় তাঁরা অভিযুক্ত। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে গত বছর ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি টিভির ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু এই মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার বিষয়টি জেল পরিদর্শনে এসে অনুধাবন করেছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব তথা বিচারক শুক্তি সরকার। জেলের প্যারা লিগ্যাল ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে বন্দি মহিলাদের হস্তশিল্পের ব্যাপারে উৎসাহের কথা জানতে পারেন তিনি। এর পরেই শুক্তি জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য সরকারের 'আনন্দধারা প্রকল্পে'র মাধ্যমে বাবুই ঘাস ও শালপাতা দিয়ে হস্তশিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জেলের মধ্যে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুক্তি সরকার, ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক শুভ্রজিৎ গুপ্ত, ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারের সুপার রাজেশকুমার মণ্ডল, কন্ট্রোলার তপনকুমার দাস, অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের সভানেত্রী মধুমিতা পরিহারি, ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের অফিস মাস্টার সুব্রত বারিক।
ঝাড়গ্রামের অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের প্রশিক্ষক ভারতী দত্ত জেলবন্দি মহিলাদের দশ দিন প্রশিক্ষণ দেবেন কী ভাবে বাবুই দড়ি পাকাতে হয় এবং তা দিয়ে কী ভাবে ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করা যায়। প্রশিক্ষণ শেষে মহাসঙ্ঘের সদস্যারা জেলবন্দি মহিলাদের কাঁচামাল সরবরাহ করবেন। জিনিস তৈরির পর বন্দিদের কাছ থেকে তা কিনে বাজারজাত করবে মহাসঙ্ঘ।
ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারের সুপার রাজেশকুমার মণ্ডল বলেন, 'জেলাশাসক এবং ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব ম্যাডামের তৎপরতায় মহিলা বন্দিদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে। এ জন্য মহিলা বন্দিদের পারিশ্রমিকও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। যা তারা বন্দিকালীন অবস্থায় কিংবা জামিন পাওয়ার পর তুলতে পারবেন।'
ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক শুভ্রজিৎ গুপ্ত বলেন, 'নারী দিবসে মূলমন্ত্র এটাই হওয়া উচিত মেয়েদের আত্মমর্যাদার সঙ্গে স্বাধীন ভাবে বাঁচার। মহাসঙ্ঘের মাধ্যমে হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিস ঝাড়গ্রাম ও কলকাতায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিভিন্ন স্টলে বিক্রি করা হবে।'
শুক্তি সরকার বলেন, 'মহিলাদের বন্দি জীবনের কষ্টের স্মৃতি মুছে ফেলতেই হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও এই প্রশিক্ষণের ফলে স্বনির্ভর হয়ে সমাজে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন মহিলারা। বাবুই ঘাস, শালপাতা দিয়ে তৈরি নানান হস্তশিল্পের লভ্যাংশের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাবেন তারা।'