এই সময়, বারাসত: নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। কিন্তু মেধাবী। তাই বাবা-মা কষ্ট করেই পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে বারাসতের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। মেধাবী ছাত্র ভালো রেজাল্টের দৌলতে স্কলারশিপও জুটিয়ে নেন। কিন্তু অনলাইনে গেম খেলার নেশাই কাল হলো।স্কলারশিপ ও মা-বাবার পাঠানো টাকা মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা গেম খেলতে গিয়ে উড়িয়ে ফেলেন অনিমেষ মাইতি নামে বি-টেকের ছাত্রটি। মা-বাবাকে কী জবাব দেবেন বুঝতে না পেরে এরপর বারাসতের মেস ছেড়ে তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খড়্গপুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মা-বাবার হাতে তুলে দিয়েছে বারাসত থানার পুলিশ।
নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে অনিমেষকে উচ্চশিক্ষার জন্য বারাসতের কাজীপাড়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন মা-বাবা। অনিমেষ এখন ফার্স্ট ইয়ারে। থাকতেন কাজীপাড়ায় একটি মেসে। মেসে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচের জন্য নিয়মিত টাকা আসত বাড়ি থেকে। কিন্তু অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে স্কলারশিপের টাকা ও বাড়ির পাঠানো টাকা খরচ করে ফেলেন তিনি।
বাড়ির লোক জানতে পারলে কী হবে, এই ভয়েই পালান তিনি। বুধবার বারাসতে ছিল প্রধানমন্ত্রীর সভা। সেই সভায় যাওযার নাম করে মেসের বন্ধুদের বলে বেরিয়ে যান। তারপর থেকে অনিমেষের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ হলেও মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য কথা হয়েছিল রুমমেটদের সঙ্গে।
কিন্তু রাতে অনিমেষ মেসে না ফেরায় দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান রুমমেটরা। তাঁরাই খবর দেন অনিমেষের বাড়িতে। উদ্বিগ্ন পরিবার বৃহস্পতিবার সকালে বারাসত চলে আসে। সেই সকালেই মেসের এক রুমমেট থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। অনিমষের খোঁজ পেতে পুলিশ তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ জানতে পারে অনিমেষের মোবাইল লোকেশন দেখাচ্ছে বাগনান। কিছুক্ষণ পরেই লোকেশন দেখায় টিকিয়াপাড়া। তারপরেই দেখা যায় হাওড়া ময়দানে রয়েছেন অনিমেষ। এরপর তিনি ফোন বন্ধ করে দেওয়ায় আর কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। কিন্তু হাল ছাড়েনি বারাসত থানা। সন্ধ্যায় অনিমেষের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় পাঁশকুড়ার কাছে।
শুক্রবার ভোরে খড়্গপুর রেল স্টেশনের কাছে তাঁর লোকেশন জানতে পারে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ যোগাযোগ করে খড়গপুর জিআরপির সঙ্গে। এরপর জিআরপির সহযোগিতায় এ দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ খড়গপুর রেলস্টেশন থেকে বি টেকের ছাত্র অনিমেষকে উদ্ধার করে বারাসত থানা। স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেকে ফিরে পেয়ে স্বস্তিতে মা-বাবা। তাঁরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।