কয়লা আর কাঠ পুড়িয়ে ভিক্টোরিয়া চত্বরে রান্না নিষিদ্ধ, জানাল পুরসভা
এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৪
এই সময়: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে গত কয়েক বছরে একাধিকবার প্রকাশ্যে উনুন জ্বালানো নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তা মানা তো দূরের কথা, কোথায় কয়লা বা কাঠের জ্বালে খোলা আকাশের নীচে রান্না হয়, তার কোনও তথ্য আদালতে জমা দিতে পারেনি পুরসভা। শেষে কোর্টের হুঁশিয়ারিতে কাজ হলো।এই মামলার সর্বশেষ শুনানিতে কলকাতা পুরসভাকে ভর্ৎসনা করে রিপোর্ট তলব করেছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। পুরসভা স্বীকার করেছে, ঐতিহাসিক এই সৌধের আশেপাশে যে সব হোটেল এবং খাবারের দোকান রয়েছে, তার অধিকাংশই কয়লা বা কাঠের জ্বালে রান্না করে। তবে তার বিস্তারিত তথ্য দিতে এবং ব্যবস্থা নিতে আরও ছ'মাস সময় চেয়েছে পুরসভা।
মধ্য কলকাতায় দূষণের জেরে দীর্ঘদিন ধরেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো সৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রমাণ হয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহন তার অন্যতম কারণ। শহরের সবথেকে বড় বাস টার্মিনাস ধর্মতলায়। টার্মিনাস সরানোর নির্দেশ আদালত আগেই দিয়েছে। দূষণের আরও একটি বড় কারণ হলো খোলা আকাশের নীচে কয়লা, কাঠ বা কেরোসিন জ্বালিয়ে রান্না করা। ভিক্টোরিয়ার তিন কিলোমিটারের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রান্নার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কোর্ট।
গত বছরের অগস্টে ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল, ভিক্টোরিয়ার তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কোনও হোটেল-রেস্তরাঁয় যাতে উনুন জ্বেলে রান্না করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অস্থায়ী দোকান বা স্টল, এমনকী ইস্ত্রির দোকানের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশিকা বহাল ছিল। ১ মার্চের মধ্যে হলফনামা তলব করেছিল আদালত। ২৯ ফেব্রুয়ারি তা জমা দেয় পুরসভা। ভিক্টোরিয়া বাঁচাতে ২০০৭ সালে এই মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।
কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে পরিবেশ ও হেরিটেজ বিভাগের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ্তকুমার চট্টোপাধ্যায় হলফনামায় জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে পুরসভার চিফ ভ্যালুয়ার এবং সার্ভেয়ার বিভাগ থেকে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওই সৌধের ২৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কোন ধরনের দোকান কতগুলি রয়েছে, তা জানা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার চার দিকে তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কত হোটেল এবং খাবারের দোকান রয়েছ, তা-ও জানা হচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ হোটেল এবং খাবারের দোকানে রান্না হয় কয়লা অথবা কাঠ জ্বালিয়ে। বেশ কিছু দোকানে ব্যবহার হয় কেরোসিন। এই সমীক্ষা আরও নিখুঁত করতে কোনও একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে চায় পুরসভা।
মামলাকারী সুভাষ দত্ত বলেন, 'কয়লা জ্বালিয়ে রান্না কথা তো সকলেরই জানা। সেটা জানাতে পুরসভার এত বছর লেগে গেল! তা হলে তা বন্ধ করতে কত দিন লাগবে?'