অভিনয় বা চলচ্চিত্র জগৎ থেকে রাজনীতিতে প্রবেশের ঘটনা নতুন কোনও ঘটনা নয়। গোটা দেশের বুকে তো বটেই, এই বাংলাতেও তার ঝুড়ি ঝুড়ি নজির রয়েছে। শাসক থেকে বিরোধী, সব পক্ষই ভোটের লড়াইতে বিনোদন জগতের পরিচিত মুখেদের দিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছে। এমনকী সেই তালিকায় শুধু টলিউড নয়, প্রবেশ ঘটেছে বলিউডেরও। অভিনয় জগতের পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানে এসে যাঁরা নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছেন, শক্ত করেছেন পায়ের তলার জমি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিরণ চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা হিসেবে নজর কাড়ার পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানেও যথেষ্ট পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হওয়ার পর এবার তাঁকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে বিজেপি।পুরো নাম হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। ২০০৭ সালে নবাব নন্দিনী ছবিতে নবাব চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে নায়ক হিসেবে রিল লাইফে প্রবেশ। প্রথম ছবিতেই জিতে নিয়েছিলেন 'অ্যাকশন হিরো'র পুরস্কার। তারপর ভালোবাসা ভালোবাসা, জ্যাকপট, জামাই ৪২০, জিও পাগলা, জামাই বদল সহ প্রচুর ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। হিরণের ঝকঝকে চেহারা ও দক্ষ অভিনয় বারেবারেই মন জয় করেছে দর্শকদের। এর মধ্যে ভালোবাসা ভালোবাসা ছবিতে অভিনয়ের পর দর্শকদের কাছে কার্যত 'চকোলেট বয়' ইমেজ তৈরি হয় তাঁর। সেই ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একটানা বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় তাঁকে।
এদিকে দেখতে দেখতে চলে আসে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন। ওঠে প্রবল বিজেপি হাওয়া। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করতে থাকেন, হয়ত ১০ বছর পর ফের একবার রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী থাকবেন বঙ্গবাসী। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। সেই সময় ওই প্রবল বিজেপি হাওয়ায় অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন পদ্ম শিবিরে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অভিনয় জগতের। আবার অনেকে ঘাসফুল শিবির ছেড়েও যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেই সময় যাঁরা বিজেপিতে যোগ দেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিরণ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপস্থিতিতে এক সভায় বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগদানের আগে তৃণমূলের যুব শাখার সহসভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন হিরণ। পরে অবশ্য দল ছাড়েন তিনি।
বিজেতি যোগদানের পর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন খড়গপুর সদর থেকে তাঁকে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। ভোটে ৩,৭৭১ ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। তবে বিধানসভা ভোটে তাঁর জয়ের কথা বলতে গেলে খড়গপুর সদর কেন্দ্রটি নিয়ে দু - এক কথা না বললেই নয়। ১৯৬৯ সাল থেকে ওই আসনটিতে পরপর জয়ী হন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল (চাচা)। ১৯৬৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মোট ১০ বার ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন তিনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন চাচার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। তারপর ২০১৯ সালে দিলীপকে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট দেয় বিজেপি। ফলে ওই আসনে উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই উপনির্বাচনে আসনটিতে প্রথমবারের জন্য জয়ী হয় তৃণমূল। বিধায়ক হন প্রদীপ সরকার। তবে ২০২১ - এর নির্বাচনে আর তা ধরে রাখতে পারেনি তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের লড়াইতে নেমেই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রদীপ সরকারকে হারিয়ে বিধানসভায় পা রাখেন হিরণ।
তবে গত বছর অবশ্য হিরণকে নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয় রাজনৈতিকমহলে। শোনা যায় তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন হিরণ। এমনকী সেই সময় একটি ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেটিকে ঘিরে জল্পনা আরও তীব্র হয়। যদিও হিরণ নিজে অবশ্য সেই সমস্ত জল্পনা বারেবারেই খারিজ করে দিয়েছেন, থেকে গিয়েছেন বিজেপিতেই। আর এবার দেখা গেল তাঁকে আরও বড় মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিজেপি। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। এদিকে এই কেন্দ্র থেকেই পরপর দু'বার তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়েছেন অভিনেতা দেব। এবারেও তিনি ওই কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াতে পারেন বলে জল্পনা। সেক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি তেমনটা হয়, তাহলে অভিনেতা বনাম অভিনেতার লড়াইয়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে ঘাটালবাসী।