• প্রাণঘাতী ত্রাণ! মাথায় প্যাকেট পড়ে মৃত ৫
    এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: বিপর্যয়ের আবহে যে ত্রাণ বহু মানুষের প্রাণ বাঁচায়, সেই ত্রাণই একাধিক প্রাণ কাড়ল গাজ়ায়। ইজ়রায়েলের লাগাতার হামলায় ধুঁকতে থাকা গাজ়ায় সম্প্রতিই এয়ারড্রপ করে ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছিল আমেরিকা। জর্ডন, ইজিপ্ট, ইউএই-র মতো কিছু দেশ যেটা অনেক আগে থেকেই করতে শুরু করেছে।শুক্রবারও গাজ়া সিটির পশ্চিমে আল শাতি শরণার্থী শিবিরে প্লেন থেকে প্যারাশুটে করে প্যাকেজড ফুড, আটা-ময়দা ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। আমচকা শোনা গেল প্রচণ্ড শব্দ। প্যারাশুট না-খোলায় বড় মাপের একটি খাবারের প্যাকেট দুরন্ত গতিতে নামতে নামতে সটান আছড়ে পড়ল শিবিরের একটি অংশে।

    মাথার উপর ত্রাণের প্যাকেট ভেঙে পড়ায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় ৫ জনের। ফিরোজ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার ওই দুর্ঘটনায় আহত ডজনখানেক। এই মুহূর্তে তাঁরা গাজ়ার আল শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একটি সূত্রের দাবি, মৃতের তালিকায় থাকা ৫ জনই শিশু!

    প্রাণের দায়ে শরণার্থী শিবিরে মাথা গুঁজে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, 'বিমান থেকে খাবারের প্যাকেট ফেলা হচ্ছে দেখেই ভাইকে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম— অন্তত একটা আটার প্যাকেটও যদি পাই! কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই দেখলাম, একটা পাহাড়ের মতো প্যাকেট উপর থেকে সাঁইসাঁই করে নেমে আসছে নীচের দিকে। ভয়ে আর এগোইনি। পরে জানলাম সবটা। আমরা এ দিতে না-খেতে পেয়ে মরছি। আর ওই পাঁচটা প্রাণ খাবারের প্যাকেট চাপা পড়েই মরে গেল। এভাবে মরাই বোধহয় আমাদের নিয়তি।'

    কিন্তু বিমানটি কোন দেশের? দিনের শেষেও তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয় এক সাংবাদিকের বক্তব্য— তিনি বিমান থেকে শিবিরে ত্রাণের প্যাকেট ফেলা দেখেছেন, কিন্তু কোন দেশের বিমান সেগুলো ফেলছিল, তা তিনি ঠাহর করতে পারেননি। আমেরিকা বলছে, 'আমাদের বিমান নয়।' এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে জর্ডনের সেনাবাহিনীও। তাদের চারটি বিমান ত্রাণ বিলির কাজে রয়েছে এবং কেউই কোনও দুর্ঘটনার খবর দেয়নি বলে দাবি তাদের।

    অবরুদ্ধ গাজ়ায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াটা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। জল-স্থলের প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলের সেনা। মিশর ও গাজ়ার মধ্যবর্তী রাফা বর্ডার ক্রসিং খোলা থাকলেও ত্রাণের কাজে তা যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে আবার ত্রাণের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্যালেস্তিনীয়দেরও গোলা-বারুদের নিশানা করা হচ্ছে বলে খবর মিলছে প্রায় রোজই।

    এই আবহেই আকাশপথে ত্রাণ বিলি চলছে। তবে শুক্রবারের ঘটনায় তা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিতি মার্কিন সংবাদিকদের দাবি, 'ত্রাণের প্যাকেটগুলোটে প্যারাশুট ঠিকমতো লাগানো হলেও যে সব কাঠের ফ্রেমে বান্ডিলগুলো আটকে দিয়ে নীচে ফেলা হচ্ছে, প্যারাশুট খোলার পরে সেগুলো সবই বিপজ্জনক গতিতে নীচে পড়ছে। তাই প্যারাশুট না-খুললে যে কী হবে, সেই ভয়টা আমরা আগেই পাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনাটা শেষ পর্যন্ত ঘটেই গেল।'

    কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ হবে কবে। একটা সময়ে ইউএস প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদী শোনালে, এখন তিনিও বেসুরে গাইছেন। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমুদ্রপথেও ত্রাণ পৌঁছে দিতে গাজ়ার উপকূলে অস্থায়ী বন্দর বানাচ্ছে ইউএস। ওয়াশিংটনের দাবি, ১৫ মার্চ থেকে সমুদ্রপথেও ত্রাণ পৌঁছবে গাজ়ায়। এ দিকে ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, সাইপ্রাসের একটি সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে গাজ়ায় ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ আজ, রবিবার থেকেই শুরু হতে পারে।
  • Link to this news (এই সময়)