শীত পড়তে না পড়তে দলে দলে ওরা এসে হাজির হয়— সেই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে। যে উপকূলে এসে ওরা মিলিত হয়, ডিম পাড়ে, ছ’মাসের জন্য সেটাই তাঁদের ঘরবাড়ি। কিন্তু সেই ঘরেই ওরা নিরাপদ নয়। তার ফলে দিন দিন কমছে অলিভ রিডলে কচ্ছপের সংখ্যা। বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী এই কচ্ছপ বিপন্ন তালিকায় পড়ে।এই কচ্ছপ বাঁচাতে অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী অর্থাৎ ইন্ডিয়ান কোস্টগার্ড। ওডিশার গহীরমথা মেরিন স্যাংচুয়ারিতে কচ্ছপ এবং তাদের ডিম বাঁচাতে টানা ছ’মাস ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেয় তারা। শুধুমাত্র এই কাজের জন্যই তৈরি করা হয়েছে পৃথক দল।
২০ কিমি উপকূল জুড়ে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে ওই এলাকায় মৎস্য শিকারও বন্ধ থাকে। গত দু’বছরে কোস্টগার্ড বাহিনী বেশ কিছু চোরা শিকারিকে পাকড়াও করেছে, আটক করা হয়েছে তাদের নৌকাও। কোস্টগার্ডের এই প্রকল্পের নাম ‘অপারেশন অলিভিয়া’।
মেক্সিকো থেকে ভারত— অলিভ রিডলে কচ্ছপ বহু বছর ধরেই নির্দিষ্ট জায়গায় ডিম পাড়ে। এক সঙ্গে ৩-৬ লক্ষ কচ্ছপ একই উপকূলে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা একটু বড় হলে তাদের নিয়ে ফিরে যায় নিজেদের আবাস স্থলে। পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড়-দু’দশক ধরে অলিভ রিডলের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে কমছে।
কারণ, চোরাশিকারি। ডিম এবং কচ্ছপের মাংসই এর প্রধান কারণ। বিদেশে এর চামড়াও পাচার করা হয়। ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলার গহীরমথা ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় ধামারা, দেবী এবং কুশল্যা নদীর চর বরাবর ডিসেম্বর নাগাদ ভিড় করে লক্ষ লক্ষ অলিভ রিডলে।
কোস্ট গার্ডের উত্তর-পূর্ব রিজিয়নের আইজি, কম্যান্ডার ইকবাল সিং চৌহান বলছেন, ‘চোরাশিকারের ফলে এক দশক আগে থেকে ওড়িশা উপকূলে অলিভ রিডলের কম আসছিল বলে বন দপ্তরের নজরে পড়ে। বন দপ্তর নিজেদের মতো করে পাহারার ব্যবস্থা করলেও জলপথে শিকার চলছিলই। তখন তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে। শেষ পর্যন্ত আমরা পাহারার ব্যবস্থা করি।’
তিনি জানান, বছর তিনেক আগে পুরোদস্তুর পৃথক দল তৈরি হয়। অপারেশনের নাম দেওয়া হয় অপারেশন অলিভিয়া। কীভাবে চলছে এই পাহারাদারি? কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরে অলিভ রিডলের দল আসতে শুরু করার আগেই নজরদারি শুরু হয়ে যায়। চার বা পাঁচটি ভেসেলকে শুধু মাত্র পাহারাদারির কাজে নিয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে আকাশ পথেও নজরদারি চালায় তাদের এয়ারক্র্যাফ্ট।
ইকবাল সিং চৌহান বলেন, ‘একটি বিশাল এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই পাহারাদারি শুরু হয়। ওই এলাকায় আমাদের ভেসেল ছাড়া আর কোনও নৌকা বা ভেসেল যেতে দেওয়া হয় না। পাততে দেওয়া হয় না জালও। নিয়ম ভাঙলে আমাদের বাহিনী তাঁদের ধরে বন দপ্তরের হাতে তুলে দিই।’ কোস্ট গার্ডের হিসেবে গত বছর এই এলাকায় ২৩৬ শিপ ডে’জ় এবং ৭৯ এয়ারক্র্যাফ্ট আওয়ার্স পাহারাদারির কাজে ব্যবহার হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা না মানায় গত দু’বছরে ৮০ জন মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি ৮টি ট্রলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’
অলিভ বাঁচাতে বন দপ্তর একাধিক পদক্ষেপ করে। কোস্ট গার্ডকে অনুরোধ করার পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের জন্য ছ’মাসে সমুদ্রের ওই উপকূলে মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা যেমন জারি করা হয়। পাশাপাশি ওই এলাকার কাছাকাছি হুইলার দ্বীপে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মিসাইল পরীক্ষা করে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রককে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে জানুয়ারি থেকে মার্চ কোনও মিসাইল পরীক্ষা না করা হয়। কারণ ওই সময় কচ্ছপদের মিলনকাল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ওই অনুরোধ মেনে নিয়েছে।