এই সময়: বিধাননগর থেকে ব্যারাকপুর যাওয়ার জন্য সম্প্রতি ট্রেনে উঠেছিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা বিপ্লব গুহ। ট্রেনে উঠেই জানলার ধারের সিটে বসে ফোন ঘাঁটছিলেন তিনি। দমদম স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে এক যুবক এসে তাঁর ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ।‘মোবাইলটা একটু দেবেন দাদা, বাড়িতে একটা ফোন করব?’ উল্টোদিকের রেলযাত্রীর প্রশ্ন, ‘আপনার ফোন নেই?’ শিয়ালদহ থেকে নৈহাটিগামী প্রথম যাত্রীর জবাব, ‘বিধাননগর স্টেশন ছাড়ার পর থেকেই দেখছি ফোনটা নেই।’ এমন অভিজ্ঞতা একজন-দু’জনের নয়।
ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে যাতায়াত করতে গিয়ে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অসংখ্য যাত্রীকে। কখনও পকেট থেকে চুরি যাচ্ছে মোবাইল, কখনও বা ব্যাঙ্ক থেকে ল্যাপটপ-সহ ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিচ্ছে ছিনতাইবাজদের দল। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, নৈহাটি থেকে বিধাননগর স্টেশনের মধ্যে এই ছিনতাইবাজের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি।
২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ সালে নৈহাটি-বিধাননগর স্টেশনের মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশ খানিকটা বেড়েছে বলেও খবর। ২০২২ সালে ওই দুই স্টেশনের মধ্যে মোবাইল চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ১৮৪টি। সে জায়গায় গত বছর এমন কমপ্লেন্টের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১০! চুরির ঘটনা সবচেয়ে বেশি শিয়ালদহ-বিধাননগর, বিধাননগর-দমদম, দমদম-বেলঘরিয়া স্টেশনের মধ্যে।
এবং এ ক্ষেত্রে ছিনতাইবাজদের টার্গেট করা সময়টা মূলত সকাল ৯ থেকে বেলা ১১ টা এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত। ওই সময়েই শিয়ালদহ-বেলঘরিয়া পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। ছিনতাইবাজরা তাই ওই সময়টাকেই বেছে নেয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
সোদপুরের বাসিন্দা, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী ট্রেনের নিত্যযাত্রী সৌরভ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘এই লাইনে ফোন চুরির ঘটনা কার্যত রুটিনে পরিণত হয়েছে। উপযুক্ত নজরদারি না থাকার কারণেই এই পরিস্থিতি।’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেল পুলিশের কর্মীরা অভিযোগও নিতে চান না বলে দাবি যাত্রীদের।
যদিও রেল পুলিশের কর্তাদের দাবি, ‘ট্রেনে চুরি রুখতে প্রতিটি স্টেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে যাত্রীরা ফোন চুরির অভিযোগ দায়ের করেন, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা খুঁজে বেরও করে মালিকের হাতে ফিরিয়েও দিই। পাশাপাশি ফোন চুরির ঘটনা রুখতে এই অপরাধে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের স্টেশনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তাঁদের বক্তব্য, যারা এ ধরনের দুষ্কর্মে যুক্ত, তাদের যাতে যাত্রীরা চিহ্নিত করতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন স্টেশনে এদের ছবি-সহ হোর্ডিংও দেওয়া হয়। যদিও যাত্রীদের পাল্টা প্রশ্ন, এ ভাবে ছবি দেখে কি ছিনতাইবাজদের চিনে ফেলা আদৌ সম্ভব? তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে এরা মুখে মাস্ক পরে ‘অপারেশন’ চালায়। তখন কী করণীয়!