২ হাজার কোটির মাদক পাচার! ধৃত তামিল ফিল্মের প্রযোজক
এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৪
এই সময়: দু'হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ড্রাগ বিদেশে স্মাগল করার অভিযোগে এক তামিল ফিল্ম প্রোডিউসারকে গ্রেপ্তার করল নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। জাফর সাদিক নামে ওই প্রোডিউসার তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে-র প্রাক্তন পদাধিকারীও। ভারত-অস্ট্রেলিয়া-নিউ জ়িল্যান্ডের মধ্যে ড্রাগ ট্র্যাফিকিং নেটওয়ার্কের 'কিংপিন' হিসেবে জাফরকেই চিহ্নিত করেছে এনসিবি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পলাতক ছিলেন বলে শনিবার দাবি করেছেন ব্যুরোর তদন্তকারীরা।ড্রাগ স্মাগলিংয়ে জাফরের নাম জড়ানোর পর গত দু'সপ্তাহ ধরেই প্রতিবাদে সামিল বিরোধী দলগুলি। বিরোধী এআইএডিএমকে-র জেনারেল সেক্রেটারি তথা তামিলনাড়ুর বিরোধী দলনেতা কে পালানিস্বামী এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের ব্যাখ্যার দাবিতে সরব। দলের কেউ কী ভাবে ড্রাগ র্যাকেটের 'কিংপিন' হতে পারেন, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে বলে পালানিস্বামীর দাবি। এ নিয়ে আগামী ১২ তারিখ রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনে সামিল হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি। সুর চড়িয়েছে বিজেপি-ও।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এনসিবি জানিয়েছিল, চার মাস ধরে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে তাদের যৌথ অভিযানে ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ড্রাগ কার্টেলটি ধরা পড়ে। ভারত থেকে খাবারের আড়ালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জ়িল্যান্ডে সিউডোফেড্রিন পাচার করা হচ্ছে বলে সেখানকার পুলিশ 'টিপ-অফ' দেয় এনসিবি-কে। এই সূত্রে দিল্লির বাসাই দারাপুর থেকে তিন জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। চক্রটি বিমান ও জাহাজে করে পাচারকাজ চালাত বলে অভিযোগ।
এনসিবি-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জ্ঞানেশ্বর সিং জানান, ৪৫টি পার্সেলে সাড়ে তিন হাজার কেজি সিউডোফেড্রিন পাচার করেছেন জাফর। নারকেল ও ড্রাই ফ্রুটসের আড়ালে সেগুলি পাঠানো হয়। 'মেথামফেটামিন' বা 'ক্রিস্টাল মেথ' বা 'আইস' তৈরিতে কাজে লাগে এটি। ভারতে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত। বিষয়টি সামনে আসার পর তিরুবনন্তপুরম, মুম্বই, পুনে এবং হায়দরাবাদ ঘুরে জাফর জয়পুরে পালিয়েছিলেন বলেও জানান জ্ঞানেশ্বর। তাঁর দাবি, ড্রাগ পাচার থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন জাফর। এবং সেই টাকাই তিনি রিয়েল এস্টেট ও ফিল্ম প্রোডাকশনে ঢেলেছেন। তাঁর সাম্প্রতিকতম ফিল্মেও এই চক্রের টাকা ঢুকেছে বলে জানাচ্ছেন জ্ঞানেশ্বর। এমনকী, এই টাকায় একটা হোটেল পর্যন্ত কেনেন জাফর। এ পর্যন্ত চারটি ছবি বানিয়েছেন ওই প্রোডিউসার। আরও একটির রিলিজ় করার কথা এ মাসে।
গত সপ্তাহেই মাদুরাইয়ে এক রেলযাত্রী দম্পতি এবং চেন্নাইয়ের একটি ভ্যাট থেকে ১৮০ কোটি টাকার মেথামফেটামিন উদ্ধার হয়। এগুলি শ্রীলঙ্কায় পাচার করার কথা ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এই ড্রাগ পাচার চক্রের তদন্তে ভারতীয় এজেন্সিগুলিকে সহযোগিতা করছে ইউএসের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-ও।
চক্রটির কথা সামনে আসতেই এবং তাতে জাফরের নাম জড়ানোয় এআইএডিএমকে-র মতো আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। তামিলনাড়ু বিজেপির প্রধান কে আন্নামালাই ডিএমকে-কে নিশানা করে অভিযোগ করেন, 'ড্রাগ ক্যাপিটাল অফ ইন্ডিয়া'তে পরিণত হয়েছে ওই রাজ্য।
মেথামফেটামিন কী?এটি একটি অত্যন্ত অ্যাডিকটিভ এক ধরনের সাইকোস্টিমুল্যান্ট ড্রাগ, যার প্রভাব অনেকটা কোকেনের মতো। এর নেশায় অত্যন্ত শক্তিশালী ইউফোরিক প্রভাব পড়ে এবং এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গোটা বিশ্বে তো বটেই, বিশেষত অস্ট্রেলিয়ায় এই ড্রাগের চাহিদা খুব বেশি। গত মাসে এনসিবি লুধিয়ানার একটি ল্যাবরেটরিতে হানা দেয়। সেখানে মেথামফেটামিন তৈরি করতে তিন মেক্সিকান নাগরিককে ভাড়া করা হয়েছিল। দক্ষতার কারণে এদের গত বছর নভেম্বরে ভারতে উড়িয়ে আনা হয়। এ হেন মেথামফেটামিন তৈরিরই অন্যতম উপকরণ সিউডোফেড্রিন।