Election Commission Of India : মদ খাইয়ে ভোট! বাংলায় নজর কমিশনের
এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৪
তাপস প্রামাণিক
এই সময়: পেটভর মদ খাইয়ে ভোট আদায় করা। এতদিন বিহার, ঝাড়খণ্ড কিংবা দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে যা শুনতে পাওয়া যেত এখন সেই ট্রেন্ড শুরু হয়েছে বাংলাতেও। এমনই অভিযোগ পেয়ে তৎপর হলো নির্বাচন কমিশন। ভোট আদায় করতে নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ ভোটারদের নগদ অর্থের পাশাপাশি দেদার মদ বিলি করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ শোনা যায় হামেশাই।এভাবে ভোটারদের ঘুরপথে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কমিশনের চোখে যা গর্হিত অপরাধ। এই প্রবণতা রুখতে এবার তাই কঠোর অবস্থান নিচ্ছে কমিশন। ভোটের সময়ে মদ বিলি রুখতে রাজ্য পুলিশ, আবগারি দপ্তর সহ বিভিন্ন ল-এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিকে কমিশনের তরফে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মদের জোগান বন্ধ করতে সীমান্ত এলাকাতেও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সে জন্য বিএসএফ’কে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।
কমিশনের খবর, এবার লোকসভা ভোটে মদ বিলি রুখতে আবগারি, কাস্টমস ছাড়াও জিএসটি অফিসারদেরও কাজে লাগানো হবে। ভোটের সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউস, বার, ম্যারেজ হলে গোপনে হানা দেবেন জিএসটি অফিসারেরা। জিএসটি এবং কাস্টমস অফিসারদের নিয়ে একটি ফ্লাইং স্কোয়াড তৈরি করা হবে।
রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোথাও ভোটারদের মদ খাওয়ানো হচ্ছে, এমন খবর পেলেই ফ্লাইং স্কোয়াড দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে, জাতীয় সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সার্চ করবে তারা। রেল স্টেশন এবং চলন্ত ট্রেনেও হানা দেবে এই স্কোয়াড। ভোটারদের বিলি করার জন্য বেআইনি ভাবে কোথাও মদ মজুত রাখা হয়েছে কি না, তার সন্ধানে ওয়্যারহাউসে ঢুকে তল্লাশি চালানো হবে।
কমিশনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের খুশি করার জন্য কেউ নগদ টাকা দিয়ে থাকে। কেউ আবার জামা-কাপড়, শাড়ি, কম্বল, ছাতা, টুপি সহ বিভিন্ন ধরনের উপহার দেয়। অনেক জায়গায় ভোটের আগের দিন মানুষকে ভালমন্দ খাওয়ানো হয়। অনেক জায়গায় আবার ভোটের সময় মদ বিলি করা হয়। একটা সময় পর্যন্ত রাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি অঞ্চলে এই চল ছিল। যেমন, উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকা কিংবা জঙ্গলমহলে কিছু অঞ্চলে ভোটের সময় মদ খাওয়ার রীতি ছিল।
কিন্তু গত কয়েক বছরে এই রোগটা গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। সেই জন্যই কমিশনের কাছে এটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বাংলায় ভোট হিংসার পিছনে এটা অনুঘটকের কাজ করে বলে মনে করছে কমিশন। সেজন্য মদ বিলি রুখতে এতটা কড়া অবস্থান নিতে হচ্ছে কমিশনকে। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোট পাওয়ার জন্য যদি কোনও রাজনৈতিক দল অথবা প্রার্থী ভোটারদের মদ বিলি করে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী তা ঘুষ হিসাবে দেখা হয়। এই অপরাধের জন্য এক বছর জেল হতে পারে। তার সঙ্গে জরিমানাও।
লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে কয়েক দিন আগেই বঙ্গ সফরে এসেছিল কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সেই সময় বিভিন্ন জেলার ডিএম, এসপি’দের পাশাপাশি আবগারি, নারকোটিকস, ইনকাম ট্যাক্স সহ বিভিন্ন এজেন্সির কর্তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলেন জাতীয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সহ কমিশনের অন্যান্য কর্তারা। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে রাজীব কুমার সাফ জানিয়ে দেন, ভোটের সময় যে কোনও মূল্যেই হোক মদ বিলি রুখতে হবে। মদ খাইয়ে ভোটারদের কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।