এই সময়: মূল মঞ্চের ব্যাক গ্রাউন্ডে অতিকায় ভিডিয়ো ওয়াল, সামনে ক্রস শেপড দীর্ঘ র্যাম্প, প্রায় দেড় হাজার বক্স ও লাউড স্পিকার, ওয়াইফাই কানেক্টেড দুটি পৃথক মিডিয়া জোন। আজ, রবিবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া তৃণমূলের জনগর্জন সভা অভিনবত্বের নিরিখে অতীতের সব ব্রিগেড সমাবেশকেই ছাপিয়ে যেতে চলেছে। বিপুল জমায়েতের সঙ্গে এই অভিনবত্বের আবহে আজ ব্রিগেড থেকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের রণকৌশলের বার্তা দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির পরে কংগ্রেসও লোকসভা নির্বাচনের আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। কিন্তু তৃণমূল এখনও করেনি। ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যদি প্রার্থী ঘোষণা করেন, তাহলে তা বড় চমক হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। যদিও এমন কোনও সম্ভাবনার কথা মানতে চাননি তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজ্যের অধিকারের কথা তুলে ধরাই এই ব্রিগেডের মূল ফোকাস বলে জানিয়েছে তিনি।তৃণমূল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে একক লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বক্তব্যের দিকেও নজর রাখবে বিপক্ষ শিবির। তৃণমূলের এই জনগর্জন সভার দিকে তাকিয়ে নতুন স্লোগানও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন। তৃণমূল করবে অধিকার অর্জন।’ ব্রিগেডে মূল মঞ্চের সঙ্গে জায়ান্ট স্ক্রিনের যে বিশাল ভিডিয়ো ওয়াল তৈরি করা হয়েছে, সেখানে লেখা হয়েছে এই স্লোগান। একের পর এক জায়ান্ট স্ক্রিন জুড়ে এই ভিডিয়ো ওয়াল, ক্রস শেপড দীর্ঘ র্যাম্পও অতীতে কোনও ব্রিগেড সমাবেশে দেখা যায়নি। তৃণমূলের মঞ্চ নির্মাণের এই অভিনবত্ব ও সার্বিক ব্রিগেড প্রস্তুতি নিয়ে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলকে। পাল্টা জবাবে কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘নতুন স্টাইলে মঞ্চ তৈরি হয়েছে। আকর্ষণীয় বক্তৃতা হবে। বাংলা জেগে উঠেছে। এই দেখে বিরোধীদের প্যানিক রিঅ্যাকশন হচ্ছে। তাই আক্রমণ। আজ থেকে পঞ্চাশ-একশো বছর আগে যে ভাবে মঞ্চ হতো এখনও সে ভাবে হবে, এমন কোনও কথা নেই।’
মূল মঞ্চ ছাড়াও ব্রিগেডে একাধিক সাইড স্টেজ করা হয়েছে। সভায় শতাধিক তৃণমূল নেতা, নেত্রী মঞ্চে থাকবেন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে অভিষেক নিজেই শনিবার বিকেলে ব্রিগেডে হাজির হন। স্নেহাশিস চক্রবর্তী, অপরূপা পোদ্দার, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়রা সেখানে ছিলেন। মূল মঞ্চ ছাড়াও র্যাম্পে হেঁটে দেখেন অভিষেক। সমাবেশের সাউন্ড সিস্টেম ঠিক রয়েছে কি না, তা দেখতে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে পরীক্ষা করেন। তৃণমূলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা। কাল ( রবিবার) দেখা হবে।’
তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের দূরবর্তী জেলা থেকে দলীয় কর্মী সমর্থকরা শনিবার কলকাতায় এসে গিয়েছেন। ইকো পার্ক, উত্তীর্ণ, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, নেতাজি ইন্ডোর সহ একাধিক জায়গায় তাঁদের রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
এই সমাবেশ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে লালবাজারও। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মোট ১৬০০ পুলিশ বাহিনী ব্রিগেডের ডিউটিতে থাকবেন। এছাড়াও থাকবেন ৩০০ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ইনস্পেক্টর, সাব ইনস্পেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক। সূত্রের খবর, ব্রিগেডে সভামঞ্চের কাছাকাছি এলাকায় দায়িত্বে থাকবেন ৩ জন যুগ্ম কমিশনার ও ২১ জন ডেপুটি কমিশনার। ব্রিগেড চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবেন অ্যাডিশনাল কমিশনার (১) মুরলীধর শর্মা। সভামঞ্চের আশেপাশে থাকবে ২টি কুইক রেসপন্স টিম। এছাড়া ব্রিগেড চত্বরে থাকবে ১১টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ৪টি দমকলের ইঞ্জিন।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ২৯টি শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটিতে থাকবে পুলিশের দল। স্থানীয় থানার পুলিশ প্রতিটি মিছিলকে এসকর্ট করবে। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি এড়াতে শহরজুড়ে টহলদারি করবে সাদা পোশাকের পুলিশ। এর পাশাপাশি থাকবে পিসিআর ভ্যান, মোটরসাইকেল পেট্রোলিং বাহিনী। এর পাশাপাশি জনগর্জন সভার দিন শহরজুড়ে প্রায় ৫০টি পিকেট থাকবে।