• Youtuber Faisal Khan: সিক্সে ড্রপ-আউট থেকে মস্কোয় পাঁচারের চাই?
    এই সময় | ১০ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: মোটা বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতীয়দের রাশিয়ায় পাঠানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এজেন্টকে শনাক্ত করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের চার্জশিটে ১২ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে ফয়জ়ল আব্দুল মুত্তালিব খানের নাম। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তত ৩০ জনকে রুশ সেনার হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে ফয়জ়লের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি কি কাজটা একা করতেন? তদন্তের সূত্র ধরে উঠে আসছে মানবপাচারের এক ভয়াবহ চক্রের কথা! আর তাতে ফয়জ়লের মতোই রয়েছেন একাধিক রাঘব-বোয়াল।ফয়জ়লের পরিচিতি অবশ্য বাড়ে তাঁর ইউটিউব চ্যানেল 'বাবা ভ্লগসে'র জন্য। সেখানেই রাশিয়া, দুবাই, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুর-সহ অন্যত্র ভারতীয়দের কাজ করতে যাওয়ায় প্রলোভন দেখান তিনি। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে এই চ্যানেলে একটি ভিডিয়ো আপলোড করেন ফৈজল। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, রুশ সেনার হয়ে কাজ করতে হবে। তার জন্য মিলবে রাশিয়া প্রশাসনের স্পেশাল সরকারি কার্ড। সেই কার্ড থাকলে সর্বত্র প্রাধান্য তো মিলবেই, কার্ডের ভিত্তিতে ভিসা এমনকী স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার রাস্তাও প্রশস্ত হবে। ফয়জ়লের কথায়, 'রাশিয়া প্রশাসন মনে করছে, যুদ্ধের সময়ে যাঁরা সাহায্য করছেন, তাঁদের কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত। তাই এই কার্ডের সুবিধা।'

    মধ্য তিরিশের ফয়জ়ল ক্লাস সিক্স ড্রপআউট। মুম্বইয়ের দাদরের এই যুবক প্রথমে মাছের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে সেলসম্যানের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে দুবাই যাওয়া। ২০১৬ সালে একটা কনসালটেন্সি ফার্ম শুরু করেন ফয়জ়ল। তার পর 'বাবা ভ্লগস' নামের ইউটিউব চ্যানেল শুরু, যার ফলোয়ার্স এখন তিন লক্ষেরও বেশি। ফয়জ়লের অফার ছিল- ভেঙে পড়া বহুতলের ভগ্নাবশেষ সরানো, সমরাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক নিচ্ছে রুশ সেনা। মাসে বেতন ১-২ লক্ষ টাকা। তবে, চাকরি পাইয়ে দিতে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি। ফয়জ়লের টোপে পা দিয়েই হায়দরাবাদ থেকে মস্কো পাড়ি দিয়েছিলেন বছর তিরিশের মহম্মদ আফসান। কিন্তু পরে আফসানের পরিবার জানতে পারেন, রস্তভ-অন-ডনে রুশ সেনার হয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাঁকে। চার দিন আগে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ গিয়েছে আফসানের। তার আগে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ গিয়েছে সুরাটের বাসিন্দা, ২৩ বছরের হামিল মানগুকিয়ার।

    এঁদের সকলকেই নিরাপদ চাকরির আশ্বাস দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ফয়জ়ল। তাঁর অবশ্য দাবি, 'বেআইনি কিছুই করিনি। গত সাত বছরে অন্তত এক হাজার ভারতীয়কে বিদেশে কাজ করতে পাঠিয়েছি। আমার একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছে বাজারে। ৩৫ জনকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, ওদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে না, সব কাজ হোমফ্রন্টে। যখন জানলাম ওদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে, ততক্ষণে পরিস্থিতি আমার হাতের বাইরে। চেষ্টা করে ৬ জনকে ওয়্যারফ্রন্ট থেকে সরিয়ে আনতে পেরেছি, বাকিদের পারিনি।' ফয়জ়লের আরও দাবি, এই চাকরিতে ঝুঁকি আছে জেনেও লোকে আসতে চেয়েছেন। অথচ, তাঁর চ্যানেলের একটি ভিডিয়োয় ফয়জ়লকেই বলতে শোনা গিয়েছে, রুশ সেনার হয়ে এই কাজ, কিন্তু কোনও ঝুঁকি নেই। তিনি নিজে গিয়ে কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে এসেছেন!

    এর আগে ২০১৮-তে দুবাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুম্বইয়ের ২৩ বছরের এক যুবক দাবি করেছিলেন, তাঁকে ইসলামে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তাঁকে দুবাইয়ে পাঠিয়েছিলেন ফয়জ়ল। সে বার ফয়জ়লকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনও মামলা হয়নি তাঁর নামে। সিবিআই সূত্রে খবর, রাশিয়ায় ভারতীয় পাচারের ক্ষেত্রে প্রধান কিংপিন রমেশ বলে এক ব্যক্তি, রুশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত তিনি। সেন্ট পিটাসবুর্গের রেস্তোরাঁ মালিক খুশপ্রীতকে রমেশই জানিয়েছিলেন, রুশ সেনায় লোক নেওয়া হচ্ছে। খুশপ্রীত খবর দেন এজেন্ট মইনকে। তাঁর থেকে খবর যায় ফয়জ়লের কাছে। বাকি তিন জনের অবশ্য দাবি, তাঁরা নির্দোষ। তাঁদের ফাঁসানো হচ্ছে।
  • Link to this news (এই সময়)