এই সময়: ব্রিগেডের ‘জনগর্জন সভা’ মঞ্চ থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রী মোদীর ‘তোলাবাজ তত্ত্ব’র জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার শিলিগুড়ির সভা থেকে মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাঠান। অথচ সেই টাকা চলে যায় তৃণমূলের তোলাবাজদের পকেটে।রবিবার ব্রিগেডের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে দিয়ে মমতা বললেন, ‘মিথ্যা কথা বললেই হলো। টাকা না দিয়েই বলছেন, খেয়ে নিয়েছে!’
এ বারের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকেই মূল হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। রবিবারের ‘জনগর্জন সভা’ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা যে রাজ্যের বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতেই মোদী সরকারকে তুলোধোনা করবেন, তা একরকম প্রত্যাশিত ছিল। চলতি মাসে বাংলায় চারবার সভা করেছেন নমো।
প্রতিটি সভা থেকেই তিনি তৃণমূলকে টার্গেট করেছেন দুর্নীতি ইস্যুতে। নানাভাবে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠালেও তাতে বাংলার গরিব মানুষের কোনও লাভ হচ্ছে না। সব টাকা তৃণমূল নেতাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। ‘জনগর্জন সভা’ থেকে বিজেপির যাবতীয় আক্রমণের জবাব দিয়েছেন মমতা ও অভিষেক।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘একশো দিনের কাজ সংবিধানের গ্যারান্টি। বলছে, সব টাকা পাঠিয়েছিলাম, খেয়ে নিয়েছে। কোথায় খেয়েছে, জবাব দাও। টাকাই তো দাওনি! খাবে কোথা থেকে!’ তৃণমূল নেত্রীর দাবি, ‘গত তিন আর্থিক বর্ষে একশো দিনের কাজে কোনও টাকা দেয়নি কেন্দ্র। মিথ্যা কথা বললেই হলো।’
তিনি বলেন, ‘৫৯ লক্ষ মানুষকে একশো দিনের কাজের টাকা আমরা দিয়েছি। আপনারা দেননি। না দিয়েই বলছেন, খেয়ে ফেলেছে! উনি বলছেন, আবাস যোজনার জন্য ৪৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। মোদীবাবু তথ্য যাচাই করে নিন। দু’বছর আগের কথা বলছি, আপনারা ২৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলেন, আমরা দিয়েছিলাম ২০ হাজার কোটি টাকা।
জায়গাও আমরা দিয়েছিলাম। ৪৩ হাজার বাড়ি আমরা তৈরি করে দিয়েছিলাম।’ এরপরই তৃণমূল সুপ্রিমোর হুঁশিয়ারি, ‘ব্রিগেডের এই জনসভা থেকে বলে যাচ্ছি, ১ মে-র মধ্যে আবাস যোজনার টাকা কেন্দ্র না দিলে, বাংলার ১১ লক্ষ লোকের বাড়ি আমরাই তৈরি করে দেবো।’
রাজ্যের বকেয়া অর্থ মেটানোর দাবিতে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকও। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় সভা করতে এসে নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, গত তিনবছরে উনি ৪২ হাজার কোটি টাকা বাংলার আবাসের জন্য পাঠিয়েছেন। উনি যদি প্রমাণ করতে পারেন, গত তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার আবাস প্রকল্পে এক টাকাও বাংলায় পাঠিয়েছেন, রাজনীতি করা ছেড়ে দেবো।’
মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘আপনি পরের বার যখন বাংলায় আসবেন, একশো দিনে কত টাকা দিয়েছেন, আর আবাসে কত দিয়েছেন, সেই শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন। সামনে আসার সাহস আপনাদের নেই।’ ২০২৪ লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রচারের ক্যাচলাইনই হলো ‘মোদী কি গ্যারান্টি’।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সভা থেকে বারবার ‘গ্যারান্টির গ্যারান্টি’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। তৃণমূল পাল্টা ‘দিদির গ্যারান্টি’ তুলে ধরেছে। অভিষেক এদিন বারবার সভায় হাজির কর্মী-সমর্থকদের কাছে জানতে চান, ‘আপনারাই বলুন, মোদীর গ্যারান্টি, নাকি দিদির গ্যারান্টি?’ তাঁর কটাক্ষ, ‘দিল্লি থেকে বহিরাগত এসে বলছেন, মোদী কী গ্যারান্টি। গ্যারান্টি জিসকা জি়রো ওয়ারেন্টি! আগে চোর চুরি করে জেলে যেত, এখন চোর চুরি করে বিজেপিতে যায়। এটাই মোদীর গ্যারান্টি!’
বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী আখ্যা দিয়ে অভিষেকের মন্তব্য, ‘যাঁরা গ্যারান্টি দিচ্ছেন, তাঁরা বাংলা ভাষাটাই বোঝেন না। বাংলাতেও কথা বলতে পারেন না। যাঁরা আমাদের মুখের ভাষা বুঝলেন না, তাঁরা মনের ভাষা কীভাবে বুঝবেন?’ ন্যাজাটের সভা থেকে পাল্টা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্ন, ‘নরেন্দ্র মোদী বহিরাগত? তিনি আপনাদের থেকে অনেক বেশি বাঙালি। তিনি বাংলার মা-বোনেদের সম্মান দিতে জানেন।’