এই সময়, বনগাঁ: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়বেন বিশ্বজিৎ দাস। ঠাকুরবাড়ির কোন প্রতিনিধির বাইরে গিয়ে এ বারেই প্রথম বনগাঁ কেন্দ্র থেকে বিশ্বজিৎকে প্রার্থী করল তৃণমূল। তবে মতুয়া না হলেও ঠাকুরবাড়ি-সহ মতুয়াদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে তফসিলি জাতির বিশ্বজিতের।রবিবার ব্রিগেডের জনগর্জন সভামঞ্চ থেকে বিশ্বজিৎ দাসের নাম ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে মাতলেন বনগাঁর তৃণমূলের কর্মীরা। এলাকায় ফ্লেক্স লাগানো থেকে নিজের মধ্যে আবির খেলা, মিষ্টি বিলি শুরু হয়ে যায়। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তখন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শঙ্কর আঢ্য।
মূলত শঙ্করের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধের জেরেই কয়েকজন কাউন্সিলার নিয়ে দল ছেড়েছিলেন বিশ্বজিৎ। শুধু দল ছাড়াই নয় ,২০২১ সালে বিজেপির টিকিটেই বাগদা থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। কিন্তু বনগাঁর বিজেপি সংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হওয়ার কারণে জেলার রাজনীতিতে তেমন কল্কে পাননি বিশ্বজিৎ।
ফলে গেরুয়া দলের প্রতি মোহভঙ্গ হতেও সময় লাগেনি বেশি। বিজেপির বিধায়ক থাকাকালীনই আচমকাই বিধানসভার অলিন্দে দাঁড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করেছিলেন তিনি। একজন বিজেপি বিধায়কের এহেন আচরণে গেরুয়া শিবিরের অন্যান্য বিধায়করা হতবাক হয়ে পড়েন। সেই থেকেই বিশ্বজিতের ঘর ওয়াপসির কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছিল। ওই বছরেই বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলে ফিরে আসেন।
দলত্যাগের পরের বছর ২০২২ সালেই দল তাঁকে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল। ততদিনে বিশ্বজিৎ দাস ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার বনগাঁ পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নিরঙ্কুশ জয় পায়। রাজ্য জুড়ে জনজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে বনগাঁয় এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
জনজোয়ার কর্মসূচি সফল করতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। এরপর থেকেই অভিষেকের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিৎ দাস যে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন, তার একটা আভাস ছিলই। তাই দিদির দূত, দিদিকে বলো কর্মসূচি-সহ ঘর ঘর জনসংযোগেও বনগাঁ সহ বাগদায় চষে বেড়িয়েছেন বিশ্বজিৎ। তিনি নিজে মতুয়া ধর্মের মানুষ নন।
কিন্তু মতুয়া-সহ ঠাকুরবাড়ি কেন্দ্রিক সব ধরনের যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। মতুয়া কমিটির সদস্যও হয়েছেন তিনি। তাই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে মতুয়াদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা বিশ্বজিৎ দাসের উপরেই ভরসা রেখেছে দল।
বিশ্বজিৎ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর বনগাঁয় কোনও উন্নয়নের কাজ করেননি শান্তনু ঠাকুর। বরং একশো দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনায় বঞ্চিতদের হয়ে পাশে থাকেননি বিজেপির সাংসদ। নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে ভাঁওতা দিয়েছেন মতুয়াদের। এবার বনগাঁর মানুষ বিজেপিকে পরাজিত করবেই।’
বিশ্বজিতের কথায়, ‘দলের কিছু মানুষের শুদ্ধকরণের জন্য দল ছেড়েছিলাম। দল এবং বনগাঁর মানুষ আমার পাশেই আছেন।’