বদলার লড়াই! প্রেস্টিজ ফাইটে অ্যাডভান্টেজ পেতে ১০ দিন আগেই প্রচারে মহুয়া
এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
জে পি মরগ্যান ব্যাঙ্কে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ। কর্পোরেট দুনিয়ায় ছিল তাঁর কর্মজীবনের প্রাথমিক আস্তানা। বিলাসবহুল জীবন যাপনের সুযোগ ছিল হাতের মুঠোয়। মার্কিন মুলুকে ব্যাঙ্কার হিসেবে উঠতেই পারতেন সাফল্যের সিড়িতে। অর্থনীতিতে স্নাতক আসামের কন্যা নেমে পড়লেন বঙ্গ রাজনীতিতে। নতুন জগতে উত্থানও রকেট গতিতে। তিনি মহুয়া মৈত্র। নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর আসন থেকে ফের তাঁকেই লোকসভায় পাঠাতে আগ্রহী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আসামের কাছার জেলায় বাঙালি পরিবারে জন্ম তাঁর। পড়াশোনার যোগসূত্রে চলে আসেন কলকাতায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা ঈর্ষা করার মতো। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেই চলে যান আমেরিকায়। আমেরিকার মাউন্ট হলিয়ক কলেজ সাউথ হ্যাডলি থেকে অর্থনীতি এবং অঙ্কে স্নাতক হন। আমেরিকার অন্যতম প্রসিদ্ধ ব্যাঙ্ক জে পি মরগ্যানে ইনভেসটমেন্ট ব্যাঙ্কার থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হন। সেই আকর্ষণীয় চাকরি ছেড়ে দেন ২০০৯ সালে। এরপরেই সটান রাজনীতিতে প্রবেশ।
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে
ভারতের সব থেকে প্রাচীন দলেই নাম লেখান প্রথমে। রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাই’ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজনীতির নেবেই। তবে হাত শিবিরে বেশিদিন মন টেকেনি। বাংলার স্ট্রিট ফাইটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেস। উচ্চ শিক্ষিতা, সুবক্তা মহুয়াকে চিনে নিতে ভুল করেননি তৃণমূল নেত্রী। প্রথমে বিধানসভায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেন। নদিয়া জেলার করিমপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় জেতেনও তিনি। পরেরবার আরও বড় লড়াইয়ে লোকসভার ময়দানে নামান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকেই পরের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে যান তিনি।
কাজের ফাঁকে মহুয়া
লোকসভায় ঝড়ের গতিতে উত্থান
লোকসভায় তাঁর বক্তৃতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর সজ্জায় অ্যাথেনিক টাচ ক্যামেরা ম্যানকে পেছন পেছন ছুটতে বাধ্য করে। ঝাঁঝালো বক্তৃতায় কেন্দ্রের শাসক দলকে লাগাতার আক্রমণের স্বভাব তাঁকে অল্পদিনের মধ্যেই ভারতীয় গণতন্ত্রের মন্দিরের নিম্নকক্ষে লাইম লাইট কেড়ে নিতে সাহায্য করে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। লোকসভায় তাঁর পারফরম্যান্স কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকেও তাঁকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য করে।
ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ কি কৃষ্ণনগরের ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?হ্যাঁনাজানি না
দেওয়াল লিখন শুরু
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে মহুয়া
যদিও, সাংসদ জীবনে বিতর্কও কিছু কম নেই তাঁর। কানাডার এক তথ্যচিত্রের পোস্টার মা কালীকে এমন ভাবে দেখানো হয়েছে তা তোলপাড় করে দেয় গোটা দেশ। সেই বিষয় নিয়ে কিছু অসংলগ্ন মন্তব্য করে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। মা কালীকে নিয়ে এরকম মন্তব্যের যেতে অনেকেরই ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে ফেলেন কার্যত অজান্তেই। তবে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। একদা মিডিয়া ফোকাসড মহুয়া সংবাদ মাধ্যমকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। তাঁর ‘দু পয়সার সাংবাদিক’ মন্তব্য রাজনীতির জগতের পাশাপাশি সংবাদ জগতেও সমালোচনা হজম করতে বাধ্য করে।
কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে মহুয়াকে কটাক্ষ সুকান্ত মজুমদারের
প্রচারের স্ট্র্যাটেজি কী?
সাতটির মধ্যে ইতিমধ্যে তিনটে বিধানসভার প্রতেকটা পঞ্চায়েত নিজে গিয়ে বুথ সভাপতি ও বুথ কর্মীদের সঙ্গে মিটিং শেষ করে ফেলেছেন। লোকসভার প্রস্তুতি হিসাবে সমস্ত বিধায়ক, সমস্ত ব্লক সভাপতি, সমস্ত প্রধান, সমস্ত জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতি এবং অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে করেছেন। তৃণমূল স্তরে গিয়ে প্রচারে অভিনবত্ব আনতে চাইছেন মহুয়া। নিজের পাঁচ বছরের কাজের প্রচারের পাশাপাশি সংগঠিনক স্তরে কোথায় ফাঁক-ফোকর আছে, যাচাই করে নিচ্ছেন নেত্রী নিজেই।
তবে লোকসভার ইতিহাসে সবথেকে খারাপ সময়টা দেখে নিলেন কয়েক মাস আগেই। সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিজেপি উঠে পড়ে লাগে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করার বিষয়ে। সংসদে অন্যান্য বিরোধী দলকে পাশে পেলেও এই বিতর্ক থেকে বের হতে পারেননি মহুয়া। এথিক্স কমিটির সুপারিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁকে লোকসভা থেকে বহিস্কার করা হয়। একটা সময়, দলও তাঁকে নিয়ে কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিলেও তাঁর মতো ক্যারিশম্যাটিক সাংসদের পাশে দাঁড়ান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের এবার তাঁকে লোকসভার টিকিট দিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিয়েছেন, বিতর্ক পিছু নিলেও দল তাঁর পাশেই আছে।