• Who is Saayoni Ghosh : অভিনয় থেকে রাজনীতির ময়দানে, 'ডাকাবুকো' সায়নীর ঘাড়ে 'এলিট' কেন্দ্র জয়ের দায়িত্ব
    এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
  • ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। হুগলি জেলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সভায় হঠাৎ দেখা যায় তাঁকে। তথাকথিত ঘোষিত বামপন্থী হয়েও তৃণমূলের পতাকা হাতে দেখে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অনেক সতীর্থরা অনেকটাই অবাক হয়ে যান। সেই শুরু! ‘ঠোঁটকাটা’ সায়নীর ঘাস ফুলে উত্থান আর আটকানো যায়নি। প্রথমে বিধানসভা, এরপর লোকসভায় ফের তাঁর উপর হাইভোল্টেজ আসন ‘যাদবপুর’ জিতে আসার দায়িত্ব দিল তৃণমূল।তৃণমূলে যোগদান

    চলচ্চিত্র উৎসবে কেন শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে? এই অভিযোগ তুলে বামপন্থীদের মিছিলে পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে, তাঁকে তৃণমূল শিবিরের দিকে ঠেলে দিতে মনে হয় অনুঘটকের কাজ করেছিল বিজেপি, এরকমটাই বলেন অনেকে। রাজনীতির ময়দানে ‘জয় শ্রীরাম’-এর মতো ধর্মীয় স্লোগানের বিরোধিতা করা এবং একটি শিব লিঙ্গের ছবি শেয়ার করা নিয়ে চূড়ান্ত বিরোধিতা করে বিজেপি। মামলা পর্যন্ত হয় হাইকোর্টে। তখনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পাশে দাঁড়ান। ‘গায়ে হাত দিয়ে দেখাক’ মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসবাণীর কিছুদিন পরেই দলে যোগ দেন সায়নী।

    প্রচার শুরু সায়নীর

    বিধানসভায় অগ্নিপরীক্ষা

    দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সভা হোক বা ২১ জুলাই শহীদ মঞ্চ, সায়নী ঘোষকে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে চেনামুখ করে তোলে। চলচ্চিত্র জগৎ থেকে বরাবরই নির্বাচনের আসরে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিতে পক্ষপাতী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলও তাই! ২০২১ সালেই আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে কঠিন লড়াইয়ে সায়নীকে মাঠে নামিয়ে দেন তিনি। আসানসোলের এ মাথা থেকে ও মাথা প্রচারে ঝড় তোলেন ‘চঞ্চলা’ নেত্রী। মাত্র চার হাজার ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছিল সায়নীকে। সায়নীর 'ফাইটিং স্পিরিট' চোখে পড়ে যায় তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

    দলের যুব নেত্রী

    সরাসরি দলে যুব সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দেন সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকেই জেলায় জেলায় একাধিক প্রচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। লাইট, ক্যামেরার সামনে যতটা সাবলীল, মঞ্চে উঠে ভাষণের ব্যাকরণ অল্প দিনেই করায়ত্ত করেন ফেলেন তিনি। তৃণমূলের অন্দরমহলে এরকমটাই গুঞ্জন ছিল, লোকসভার লড়াইয়ে তাঁকে দেখা যেতে পারে।

    ছবি ফেবসুক (facebook.com/SaayoniGhoshOfficial)

    যে কেন্দ্র একসময় রাজ্যের অন্যতম বিরোধী নেত্রী করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই যাদবপুর থেকেই সায়নীকে লড়ার সুযোগ দিলেন তৃণমূল নেত্রী। এই কেন্দ্রটিতে বরাবরই সক্রিয় রাজনীতির জগতের বাইরের কোনও বিশিষ্টজনকে দাঁড় করানোই রীতি তৃণমূল কংগ্রেসের। টলিউড অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের পরেই এই কেন্দ্রটির পাশে লেখা হয়ে যায় তাঁর নাম। অভিনয় জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসে অন্যান্য এসে বাক্য চয়নে ‘মিষ্টতা’ থাকে নায়িকাদের। সায়নীর ক্ষেত্রে সেটা নৈব নৈব চ। বরং, ঝাঁঝালো বক্তৃতার মাধ্যমেই টলিউডের ‘দুষ্টু-মিষ্টি’ নায়িকা জনসংযোগ তৈরি করেন, এমনটাই মত তৃণমূলের অনেক নেতারই।

    যাদবপুরের ইতিহাস

    এবার একটি যাদবপুর কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়া যাক। কবীর সুমন বা ডঃ সুগত বসুর মতো প্রার্থী এই কেন্দ্র যে ফাইট দিয়েছিলেন, তাঁকে ছাপিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন মিমি চক্রবর্তী। জয়ের ব্যবধান নিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় ৩ লাখে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের মিশ্রণে গঠিত এই লোকসভা কেন্দ্র গত তিনবার তৃণমূল কংগ্রেসকে ফিরিয়ে দেয়নি। এবারেও কি তাই হবে? টিকিট পাওয়ার পরেই সায়নী বলেছেন, ‘১৯৮৪ সালে যুবনেত্রী হিসেবে এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিতিয়েছিলেন। আমিও যুবনেত্রী। এবার আমাকেও জেতান। নিরাশ করব না।’

    যুব সংগঠনের নেত্রী হিসেবে এতদিনে সাংগঠনিক রাজনীতিতে অনেকটাই হাত পাকিয়ে ফেলেছেন সায়নী। মিমি চক্রবর্তী রাজনীতি থেকে সরে আসার ঘোষণার পরেই দলের একাংশের সঙ্গে মতবিরোধের কথা জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা সায়নীর খুব একটা অসুবিধা হবে না, এরকমটাই বলছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। একদা, বামপন্থী ছত্রছায়ায় থাকা এই কেন্দ্র কি এবারেও তারকা প্রার্থীকে এখান থেকে জেতাবে, সেটার উত্তর এখন অনেকটাই দূর।
  • Link to this news (এই সময়)