CAA Law: সিএএ কার্যকর হলে কেউ কি নাগরিকত্ব হারাবেন? কী বলছে আইন?
এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
অনেক আগেই সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছে নাগরিক্তব সংশোধন বিল (CAA)। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা আইনের চেহারাও নিয়েছে। এখন শুধু বাকি আইনের ছাতার তলায় বিধি নিয়ম বাস্তবায়িত করা। সিএএ নিয়ে সোমবারই বিজ্ঞপ্তি জারির পথে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমেই বড় ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজ্ঞপ্তি জারির পর দেশজুড়ে কার্যকর হতে পারে সিএএ, এমন খবর সর্বভারতী সংস্থা এনআইয়ের সূত্রে। ২০১৯ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংসদে পাশ হয়।লোকসভা ভোটের আগে দেশে কার্যকর হবে সিএএ এমনটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সম্প্রতি অমিত শাহও এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন ভোটের আগেই দেশে কার্যকর হতে পারে সিএএ। মোদীর সেনাপতির দাবি সোমবার রাতেই সত্যি হতে পারে বলে খবর মিলেছে। অমিত শাহ সেদিন বলেছিলেন, 'CAA কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয়। আইনে এমন কোনও বিধান না থাকায় কোনও ভারতীয়র নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না।' CAA হল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নির্যাতিত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের একটি আইন।'
২০১৯ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে লা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা ভারতে নাগরিকত্ব পাবেন। আপাতত ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তিন দেশের সংখ্যালঘু হিসেবে ভারতে বিবেচিত হবেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এবং জৈনরা। দীর্ঘদিন এই আইনের মাধ্যমে বাংলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করবে বলে আসছে গেরুয়া শিবির। ২০১৪ সালেও লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কথা দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে পড়শি দেশ থেকে বিতারিত সংখ্য়ালঘুদের ভারতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবেন। বিজেপি শহ বিরোধী শিবিরের বহু দিনের অভিযোগ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে অমুসলিম অর্থাৎ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান জৈন ও শিখদের নির্যাতন করা হচ্ছে ধর্মীয় কারণে। তাই তাঁরা ওই দেশগুলি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
বিজেপির প্রথম থেকেই দাবি ছিল, ওই সব দেশের সংখ্য়ালঘুদের শরণার্থী বলে মনে করে তারা। অন্যদিকে ভারতে ওই তিন দেশ থেকে সংখ্য়াগরিষ্ঠ মুসলিমদে অনুপ্রবেশকারী বলে থাকে তারা। বিতর্ক এখানে। ২০১৯ সালে আইন পাশ হলেও তা কার্যকর করা হয়নি তখন। বিরোধীদের বক্তব্য, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া কখনই কাম্য নয়। যদিও এই আইনকে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছেন দেশের শীর্ষ আদালত। তারপরেও বিরোধী দলগুলির মত, ধর্মীয় বিভেদ বাড়িয়ে দেবে সিএএ।
কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মানুষের মধ্য়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন সিএএ কার্যকর হলে কি কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন?
পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মুসলিমরা কখনই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে না?
এক কথায় এর উত্তর না। এমন কোনও লক্ষ্যে CAA আইন হয়নি। বিগত বছরগুলিতে ওই দেশগুলি থেকে আগত শতাধিক মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যোগ্যতার বিচারে নাগরকিত্ব পাবেন তাঁরা। ধর্মের বিচারে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। ২০১৪ সালে ইন্দো-বাংলাদেশ ছিটমহল সমস্যার সমাধানের পর ১৪, ৮৬৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় নাগরকিত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে হাজার হাজার মুসলমানও রয়েছেন। উক্ত দেশগুলি থেকে এদেশে এসে অবৈধ ভাবে বসবাস করা মুসলিমদের কি বিতাড়িত করা হবে?এরও উত্তর না। কোনও নাগরিকের বিতাড়নের সঙ্গে CAA-র কোনও সম্পর্ক নেই। ১৯৪৬-এর বিদেশি আইন ও ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। বিদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ এবং প্রস্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত এই দুই আইনের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কোনও ব্যক্তির ধর্ম বা দেশের ভিত্তিতে নয়। CAA-র কারণে মুসলিমরা ধীরে ধীরে ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবেন?
উত্তরে বলা যায় একেবারেই না। CAA কোনও ভারতীয় নাগরিকের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সব ভারতীয় নাগরিকরাই তাঁদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পাবেন। কোনও ভারতীয় নাগরিককে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে না সিএএ। বরং, তিন পড়শি দেশের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির শিকার বিশেষ বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই আইন ভারতীয় নাগরিকত্বের সুযোগ করে দেবে।