Pune News: ৫ লাখ বেতনের চাকরি ছেড়ে ১৫ বছর ধরে ভিক্ষুকদের চিকিৎসা, দুস্থের ভগবান অভিজিৎ ডাক্তার
এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
পথের মানুষগুলোর কাছে তিনি যেন সাক্ষাৎ মনুষ্যরূপী ভগবান! ডাকতে-হাঁকতে সময়ে-রাত-বিরেতে যখনই প্রয়োজন তখনই তাঁর দেখা মেলে। ছোট থেকে অনেকের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন থাকে। ছোট মাথায় থাকে হাজারও 'নির্মল' ভাবনা। বড় হয়ে দুস্থ মানুষের চিকিৎসা করা স্বপ্ন বোনে অনেকেই। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হয় কতটা? বইয়ের পাতাতেই সেসব নীতিশিক্ষা বন্দি হয়ে যায়। তবে এই মানুষটি সকলের থেকে আলাদা। গরিব মানুষগুলোর কাছে ভরসার খুঁটি। গরিব মানুষদের সেবার কথা ভেবেই ছেড়েছেন ৫ লাখ টাকা বেতনের লোভনীয় চাকরি। কোনও এক সকালে মনে পড়ে গিয়েছিল বাবার কথায়। বাবার কথাতেই দরিদ্র মানুষের সেবার নিজেকে নিয়োজিত করতে পথে নেমে পড়লেন।বিগত নয় বছর ধরে পথে পথে গরিব মানুষদের চিকিৎসা করে চলেছেন চিকিৎসক অভিজিৎ সোনাওয়ানে। ফুটপাথ, রেলস্টেশন এবং উপাসনালয়ের বাইরে বসে ভিক্ষুকদের চিকিৎসা করছেন তিনি। কিছুটা হলেও তাঁদের শরীরি ব্যথা লাঘবের চেষ্টা করেছেন। আজ তিনি পরিচিত 'ভিক্ষুকদের ডাক্তার' হিসেবেই। নয় বছর আগে হঠাৎই যখন সিদ্ধান্ত নিলেন পথে থাকা মানুষগুলোর অবলম্বন হয়ে উঠবেন তখন কেরিয়ারের মধ্যগগনে তিনি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় বড় পোস্টে কর্মরত। বেতন ছিল মাসে পাঁচ লাখ টাকা। হঠাৎই এক দিন চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন পথের ভিক্ষুকদের সেবা যত্ন করবেন। যাঁরা চিকিৎসার সুযোগ পান না, চিকিৎসকদের দেখানোর সামর্থ্য নেই যাঁদের সহায় হয়ে উঠবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। চাকরি ছেড়ে নামলেন পথে। ভিক্ষুকদের চিকিৎসার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। ২০১৫ সাল থেকে টানা পুনে ও চিঞ্চওয়াড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। ভিক্ষুকদের কাছে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসা করছেন। প্রয়োজন হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতেও উদ্যোগ নিচ্ছেন। শুধুমাত্র এতটুকুতেই থেমে থাকেননি অভিজিৎ। ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেও উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি।
অভিজিতের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়েছেন ১৩৫ জন
অভিজিৎ সোনাওয়ানে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে সোশ্যাল হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন (সোহম) ট্রাস্ট শুরু করেছিলেন তিনি। বলেন, 'আমার কাজ যাঁরা জানেন বা আমাকে যাঁরা প্রতিদিন সেবা করতে দেখেন তাঁরাও আমার দাতা। জনগণের কাছে আমার আবেদন ভিক্ষুকদের ভিক্ষা না দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিন।'
ভিক্ষুকদের চিকিৎসায় 'বাহন' দু'চাকা। মোটরবাইকে করেই বেরিয়ে পড়েন দুস্থ মানুষগুলোর সেবা করতে। প্রায় ১১০০ ভিক্ষুকের চিকিৎসকায় ডাঃ সোনাওয়ানে চেকআপ ও চিকিৎসা করতে ১৫ দিনে বাইকে করে বাইকে করে পুনে এবং চিঞ্চওয়াড়ের ৬০টি জায়গায় ভ্রমণ করেন। চিকিৎসার পাশাপাশি ভিক্ষুকদের নিজের পায়ে সাবলম্বী করতে কখনও তাঁদের কিনে দেন ওজন মেশিন কখনও আবার সেলাই মেশিন। তাঁর উদ্য়োগে এখনও পর্যন্ত ১৬৫ জন ভিক্ষাবৃত্তি ত্যাগ করে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে। নিজের একটি সংস্থাও রয়েছে তাঁর। তাঁর সংস্থা 'সোহম' ৫২ জন ভিক্ষুক শিশুর লেখাপড়ার খরচ বহন করে।
মহান এই উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন স্ত্রীকেও
একা নন, নিজের উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন সহধর্মিনীকেও। সর্বদা স্বামীর কাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন স্ত্রী সোনাওয়ানে। চিকিৎসক অভিজিতের কথায়, ' স্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া আমি এই কাজটি করতে পারতাম না। স্ত্রীও একটি ক্লিনিক চালান ও যোগব্য়ায়াম শেখান। এভাবেই আমাদের সংসার চলে যায়। প্রতিদিনের হাজারও ব্য়স্ততার মাঝে সময় বের করে মানুষের সেবা করে স্ত্রীও। ওঁর আয়তেই সংসার চলে এখন।' চিকিৎসক অভিজিতের স্বপ্ন ভিক্ষুকদের জন্য একটি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র খোলা, যেখানে এতে তাঁদের রান্না, সেলাই ও অন্যান্য কাজ শেখানো হবে। ভিক্ষুকদের যেন আর ভিক্ষা করে বাঁচতে না হয়, সেই স্বপ্নেই এখন বিভোর অভিজিৎ।