চেনা মাঠে 'জাত' প্লেয়ার! বারাসত জয়ে মমতার বাজি সেই কাকলিই
এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
হ্যাটট্রিক আগেই হয়েছে! এবার চতুর্থবারের জন্য লোকসভার অলিন্দে ঢোকার পালা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় একমাত্র বারাসত কেন্দ্রেরই প্রার্থী বদল হয়নি। বনগাঁ, ব্যারাকপুর এবং বসিরহাট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী পরিবর্তন হলেও বারাসতে 'অপ্রতিরোধ্য' কাকলি ঘোষ দস্তিদার। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গুড বুকে থাকা চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদার বারাসতের মানুষের মন জয় করতে লোকসভার ময়দানে নামছেন।আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবৃত পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কাকা অরুণ মৈত্র একজন বিপ্লবী ছিলেন। তাঁর মামা গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ। রাজনীতি এবং নিজের চিকিৎসা জগতে বরাবরই ভারসাম্য বজায় রেখেছেন তিনি। বারাসতের ‘ডাক্তার দিদি’ আজ জনপ্রিয় নেত্রী হয়ে উঠেছেন। তাঁকে ছাড়া বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে কাউকে ভাবা যায় না এরকমটা গুঞ্জন ছিল দলের অন্দরেই।
হার না মানা লড়াইটা তাঁর রক্তে রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, রাজনীতির জগতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হয়ে তিনি অনেক আগেই মাঠে নেমেছিলেন। প্রথম দিকে, বেশ খানিকটা ধাক্কা খেতে হয়েছে তাঁকে। ডায়মন্ড হারবার, হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েও জয়ের মুখ দেখতে পারেননি কাকলি। সাফল্য অর্জন করতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে। ২০০৯ সালে তৃণমূলের উত্থানের সময়ই বারাসত কেন্দ্রে জোড়া ফুল ফোটান কাকলি।
প্রচারের মাঝে কাকলি
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ডঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের ঘরণী হয়ে সংসারের হাল টানার পাশাপাশি রাজনীতিও বহু উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তাবড় তাবড় নেতৃত্বের সঙ্গে বিতণ্ডা নেহাত কম হয়নি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং রেশন দুর্নীতিতে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর বিবাদ নিয়ে চর্চাও হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। তবে বুথ স্তরের মিটিং মিছিল থেকে শুরু করে দলীয় কার্যকলাপে নিরন্তর পড়ে থেকে দলের কাছে বার্তা দিয়েছেন তিনি একনিষ্ঠ সৈনিক।
তবে রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি বারাসতের বিদায়ী সাংসদের। নারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ার পর থেকে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই আশঙ্কা দূর করে ২০১৯ সালে ফের নির্বাচনে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকেই দাঁড় করিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯ মোদী হাওয়ায় বনগাঁ, ব্যারাকপুরের মতো কেন্দ্র তৃণমূলের হাত থেকে বেরিয়ে গেলেও তাঁকে টলানো যায়নি। জয়ের ব্যবধান ছিল এক লাখেরও বেশি।
আমার বিরুদ্ধে যেই দাঁড়াক, তাঁকে ২ লাখ ব্যবধানে হারাব।ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার
এবারে জয়ের ব্যবধান গতবারের তুলনায় বাড়ানোই লক্ষ্য তাঁর। ভোটের টিকিট পাওয়ার আগেই তিনি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেই দাঁড়াক, তাঁকে ২ লাখ ব্যবধানে হারাব।’ জয়ের ব্যাপারে ষোলো আনা আশাবাদী তৃণমূল প্রার্থী। উল্লেখ্য, হাবড়ার বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জেল যাত্রার পরেই জেলার সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। গত কয়েক মাসে হাবড়া এলাকায় সাংসদদের আনাগোনা খানিক বেড়েছে। যদিও দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থার বৃত্তে থাকা কাকলি কে টিকিট পাবেনই, এটা স্পষ্ট ছিল বারাসত সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের কাছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাকলি
যে তিনবার কাকলি ঘোষ দস্তিদার বারাসত কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তার মধ্যে ২০১৪ সালে ব্যবধান ছিল সবথেকে বেশি। প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার। ২০০৯ সালে ব্যবধান ছিল প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার। তবে সবথেকে কম ব্যবধান এসেছিল গতবারের নির্বাচনে। ১ লাখ ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নিকটমট প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মৃণাল কান্তি দেবনাথকে পরাজিত করেন তিনি। এই কেন্দ্র থেকেই জাদুসম্রাট জুনিয়র পিসি সরকারকেও দাঁড় করিয়ে সফল হয়নি বিজেপি।
যদিও জেলা নেতৃত্বের পাওয়া খবর অনুযায়ী, নাম ঘোষণার অনেক আগে থেকেই নিজের এলাকায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বারাসতের প্রার্থী। ইতিমধ্যে নিজের কেন্দ্রে একাধিক জায়গায় ঘুরে ঘুরে ছোটখাটো সভা, বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। বারসতের তৃণমূল সাংগঠনিক জেলার ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি সোহম পাল বলেন, ‘নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বারাসতের মানুষ জানে, এবার এই কেন্দ্র থেকে ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ২ লাখ ভোটে জিতছেন।’