কব্জি থেকে কাটা হাত তুলে পড়শির বাড়ি ছুটলেন তরুণী
এই সময় | ১১ মার্চ ২০২৪
এই সময়, বাসন্তী: পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার রেনু খাতুনের হাত কেটে নেওয়ার স্মৃতি ফিরিয়ে দিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী। স্বামীর সঙ্গে সদ্য বিচ্ছেদ হয়েছিল জরিনা সর্দার মোল্লার। এদিন সেই সদ্য প্রাক্তন স্বামীর কোপে কব্জি থেকে হাত খোয়াতে হয় জরিনাকে। তিনি কাটা হাত নিয়েই পড়শির বাড়ি ছুট লাগান। ততক্ষণে পগারপার প্রাক্তন স্বামী। জরিনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত পলাতক।জরিনার স্বামী একাধিক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ছিল বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সংসারে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। শেষে স্বামী তালাকও দেয়। তারপরেও যে একটি হাত খোয়াতে হবে তা ভাবতে পারেননি জরিনা। প্রাক্তন স্ত্রীর বাড়ি এসে এলোপাথাড়ি কোপানোর অভিযোগ উঠলএক যুবকের বিরুদ্ধে। কব্জি থেকে কাটা ওই হাত নিয়েই প্রতিবেশীর বাড়িতে যান মহিলা।
প্রতিবেশীরাই তাঁকে হাসাপাতালে পাঠান। রবিবার ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাসন্তীর কালীডাঙা গ্রামের কৃষ্ণনগর-শ্রীরামপুর এলাকায়। বাসন্তী থানার পুলিশ জানিয়েছে, শাহজাহান মোল্লা নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তার প্রাক্তন স্ত্রী জরিনা সর্দার মোল্লা। ঘটনার পর থেকে শাহজাহান পলাতক। তার খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে শাহজাহানের সঙ্গে জরিনার বিয়ে হয়। জরিনাই নিজের পয়সায় বাড়ি বানিয়েছিলেন। সেই বাড়িতেই থাকত শাহজাহান। দম্পতির দুই ছেলে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শাহজাহান একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
জরিনা জানান, বাড়িতেই মহিলাদের নিয়ে আসত শাহজাহান। এই নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হতো। শাহজাহানের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করলেই জরিনাকে শাহজাহান মারধর করত বলে অভিযোগ। সপ্তাহ খানেক আগে শাহজাহান ও জরিনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
জরিনা এরপর বাড়িতে তালা দিয়ে দুই ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান। এ দিনই জরিনা নিজের বাড়ি ফেরেন। অভিযোগ, বাড়ির জানলা ভেঙে শাহজাহান আগেই বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। প্রাক্তন স্ত্রী বাড়িতে আসতেই তাঁর উপর হামলা চালায় শাহজাহান। ধারালো দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো শুরু করে জরিনাকে।
জরিনার কব্জি থেকে একটি হাত কেটে বাদ হয়ে যায়। জরিনা কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে কাটা হাত নিজের অন্য হাতে তুলে নিয়ে ছুটে প্রতিবেশী শরিফুল পিয়াদার বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তাঁর আর্ত চিৎকারে অন্য প্রতিবেশীরাও চলে আসেন। সুযোগ বুঝে পালায় শাহজাহান। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা জরিনাকে প্রথমে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে কলকাতার চিত্তরঞ্জনে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনি সেখানেই ভর্তি আছেন।
আক্রান্তর দিদি হালিমা সর্দার বলেন, ‘বোন দিল্লিতে কাজ করে টাকা জমিয়ে কষ্ট করে কৃষ্ণনগর-শ্রীরামপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছিল। সেই বাড়িতেই ছেলেদের নিয়ে থাকত। শাহজাহানের একাধিক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকায় বোনের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা বাধত। শেষে ধর্মীয় মতে বিবাহ বিচ্ছেদও হয়। এ দিনই বাড়ি গিয়েছিল বোন। এরপর এই অবস্থা। হাত কেটে নেওয়ার পাশাপাশি বোনের মাথায়, পেটে ও পায়েও কোপানো হয়েছে। শাহজাহানের কঠিন শাস্তি চাইছি।’