মিড-ডে মিলে বরাদ্দ না বাড়লে ডিমের জোগান আসবে কী করে
এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৪
বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
সামনেই লোকসভার ভোট। প্রথম পর্যায়ের প্রচারও শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় মিড-ডে মিলে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে ভোটপ্রার্থীদের সরব হওয়ার দাবি জানাল স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মিড-ডে মিলে পড়ুয়া পিছু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। সেখানে বর্তমানে ডিমের দাম প্রায় সাত টাকা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া কী করে সম্ভব?
এবিটিএ-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ জানান, প্রাথমিকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া পিছু ৮ টাকা ১৭ পয়সা মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এই টাকায় ওদের খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও গ্যাসের খরচ বহন করতে হয়। গ্যাসের দামও ব্যাপক হারে বেড়েছে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য একটি ডিম কিনতে গেলে যে টাকা খরচ হয়, তার চেয়ে পড়ুয়া পিছু বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম।তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে বার বার চিঠি পাঠিয়েছি। বহুবার রাজ্যস্তর পর্যন্ত ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এর জন্য বরাদ্দ বাড়ায়নি। এটা একটা অবাস্তব চিত্র।’ ভোটপ্রার্থীদের উদ্দেশে এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘ভোটের প্রচারে যাঁরা আসছেন, প্রার্থী হচ্ছেন বা ভোটে জিতে দিল্লিতে যাবেন, তাঁদের কাছে পড়ুয়াদের স্বার্থে এটা অন্যতম ইস্যু হওয়া উচিত। এ নিয়ে ভাবা উচিত সকলের।’ শিল্পাঞ্চলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সংগঠনের এক নেত্রীর বক্তব্য, ‘আমাদের কেন্দ্রগুলোতেও অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় সাত টাকা দামের ডিম দিতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়।’
সালানপুর ব্লকে প্রাথমিক স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক তপন রুইদাস বলেন, ‘শুধু ভাত, ডাল, সব্জির মতো সাধারণ খাবারের খরচও এই টাকায় দেওয়া যায় না। যেদিন ডিম দেওয়া হবে সেদিন খরচ আরও বাড়বে। আমাদের আবেদন, যাঁরা ভোটে দাঁড়ান বা জয় পান, তাঁরা অন্তত দিল্লিতে গিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলুন।’ বারাবনির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তপতী মণ্ডল জানায়, এত অল্প পয়সায় তাদের জন্য যে খাবার দেওয়া হয়, তাতে পুষ্টিকর কিছু থাকে না। এ নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ভাবার অনুরোধ জানায় ওই ছাত্রী।
অন্য দিকে, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবা উচিত। কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের আমলে গ্যাসের দাম থেকে অন্যান্য সব জিনিসের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। মুখে বলা হবে ছাত্র-ছাত্রীদের পুষ্টির বিষয়, আর কার্যক্ষেত্রে দেখা যাবে বরাদ্দ অর্থ বাড়ানো হবে না, এই বৈপরীত্য থাকা ঠিক নয়। তার উপর রাজ্য সরকারকে সময়মতো টাকা পয়সা দেওয়া হয় না।’