লোকসভা ভোট যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা সুনিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষকদের গতিবিধির উপরও নজর রাখবে নির্বাচন কমিশন। এর জন্য পর্যবেক্ষকদের গাড়িতে বসবে জিপিএস ডিভাইস। ভোটের দিন পর্যবেক্ষকরা হোটেলে বসে আরাম করছেন, নাকি বুথে বুথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেটা জিপিএস লোকেশন ট্র্যাক করলেই জানা যাবে। সেই মতো তাঁদের কাছে ইনস্ট্রাকশন পৌঁছে যাবে।কমিশন সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে গোটা দেশে সবমিলিয়ে প্রায় ২১৫০ জন পর্যবেক্ষক দায়িত্বে থাকবেন। সোমবার দিল্লিতে তাঁদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন কমিশনের কর্তারা। সেই বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভোটের দিন পর্যবেক্ষকদের বুথে বুথে ঘুরে বেড়াতে হবে। বুথের বাইরে ও ভিতরের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে গিয়ে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
কমিশনের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, যে কোনও ভোটে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের হয়ে তাঁরাই ভোট পরিচালনা করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, ভোটের দিন পর্যবেক্ষকদের যতটা সক্রিয় হওয়ার কথা, বাস্তবে তাঁদের সেই ভূমিকায় দেখা যায় না। অনেক সময়ে পর্যবেক্ষকদের ফোনেও পাওয়া যায় না। এসএমএস কিংবা মেল করে অভিযোগ জানালেও তাঁরা ঠিকমতো জবাব দেন না। অনেকে ভোটের দিন হোটেলে বসেই কাটিয়ে দেন। এলাকায় তাঁদের খুব একটা দেখা পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষকদের এই গা-ছাড়া মনোভাব ঠেকাতেই গাড়িতে জিপিএস বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কমিশন সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পর্যবেক্ষকরা যে সব লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন, সেখানে তাঁদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। হোটেলে বসে না থেকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, তার জন্য পর্যবেক্ষকদের মোবাইল ও ল্যান্ড ফোনের নম্বর, ইমেল আইডি এবং তাঁরা কোথায় থাকছেন, সেই ঠিকানাও পাবলিককে জানাতে হবে। এ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভালো করে প্রচার করতে বলা হয়েছে।
প্রার্থী ও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলিকে আগেভাগে পর্যবেক্ষকদের এই সব তথ্য জানিয়ে দিতে হবে। সিইও দপ্তরের ওয়েবসাইটেও সেই সব নম্বর টাঙিয়ে রাখতে হবে। শুধু ফোন নম্বর জানালেই হবে না, ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন পর্যবেক্ষকদের প্রত্যেকের ফোন কল রিসিভ করতে হবে। ভোটের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সেটাও নজরে রাখবেন পর্যবেক্ষকরা। কোনও অভিযোগ এলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সেটা মেটাতে হবে। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, পর্যবেক্ষকের সঙ্গে একজন করে লিয়াজোঁ অফিসার এবং একজন করে সিকিওরিটি অফিসার থাকবেন। তাঁদের নিয়োগ করবেন ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার।