CAA News: CAA নিয়ে একগুচ্ছ বিতর্ক, কারণ কী? জেনে নিন ৫ পয়েন্টে
এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৪
লোকসভা ভোটের আগে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ কেন্দ্রের। নির্বাচনের আগেই দেশজুড়ে কার্যকর হয়ে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করে কেন্দ্র। মঙ্গলবার থেকে সিএএ নিয়ে আবেদন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, সিএএ নিয়ে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। তবে এই সিএএ আইন নিয়ে কম বিতর্ক হচ্ছে না। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সহ একাধিক বিরোধী নেতা সিএএ ইস্যুতে আক্রমণ শানাচ্ছেন কেন্দ্রকে। এই বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৯ সালে যবে এই আইন পাশ হয় তবে থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। কিন্তু কীসের এত বিতর্ক? কেন বারবার সিএএ ইস্য়ু নিয়ে এত জলঘোলা হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জানতে হবে।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মূলত কী?
এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ,জৈন,শিখ, পার্সি, খ্রিস্টানরা যদি ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত। ২০১৪ সালের আগে ৩১ ডিসেম্বরের আগে আশ্রয় চেয়েছিলেন এবং ভারতে পাঁচ বছর বাস করলেই তাঁরা এদেশে নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
বিতর্কের সূত্রপাত কবে থেকে?
২০১৯ সালে নির্বাচনী ইস্তেহারে সিএএ কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ২০১৯ সালে বিল পাস হয়। ওই বছরেই ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর আইনে পরিণত হয় এই সিএএ বিল। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা দেশে। দিল্লি সহ অন্যান্য শহরে সিএএ বিরোধিতায় পথে নামে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি। করোনা পর্বে সিএএ চালু সম্ভব হয়নি। গত কয়েক মাস ধরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ শাসক দলের একাধিক নেতা দাবি করেছেন, লোকসভা ভোটের আগেই কার্যকর হবে সিএএ। তাঁদের কথাই সত্যি হল। তবে আইনে পরিণত হওয়ার পর সাড়ে চার বছর পর লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ কার্যকর করল কেন্দ্র।
বিতর্ক কেন?
১. উল্লেখ্যে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের কোনও উল্লেখ ছিল না। ২০১৯ সালের সংশোধনী আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ধর্মের। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মানো নাগরিক নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি সময় এদেশে থাকলে তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সেই আইনে আলাদা করে মুসলিম, অ-মুসলিমদের উল্লেখ ছিল না। এছাড়াও পুরনো আইনে বলা হয়েছিল নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এছাড়া বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। নতুন আইনে ১৪ বছর কমিয়ে ১১ বছর করা হয়েছে।
২.সিএএ কার্যকর করা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্য়ে টালবাহানা চলে। উত্তর-পূর্ব ভারত মূলত অসম থেকেই মূলত আপত্তি উঠেছিল সিএএ নিয়ে। অনেকেরই আশঙ্কা সিএএ কার্যকর হলে শরনার্থীদের ব্যাপক ভিড় বৃদ্ধি পাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। তার ফলে প্রকট হতে পারে ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত সমস্যা। অনেকের আশঙ্কা, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা ব্যাপক হারে ভারতে চলে আসতে পারে। তাছাড়া অসমে থাকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদেরও (বাংলাভাষী) নাগরিকত্ব পাওয়ার পথও চওড়া হয়ে যাবে।
৩. এই আইনে মুসলিমদরে বাদ দেওয়া নিয়েও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতে সিএএ বিরোধিতার মূল কারণ তামিলদের উদ্বাস্তুদের বাদ দেওয়া হল কেন?
৪. এই আইনে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি বলা হয়নি আইনে। সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সিএএ-এর ৬ ধারা নিয়ে। এই আইনে বলা হয়েছে ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি পর ও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে যাঁরা অসমে এসেছেন ও থেকে গিয়েছেন তাঁদের সকলেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা নিয়েই আপত্তি তোলেন অসমের বাসিন্দারা।
৫. বিরোধীদের দাবি, সিএএ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক নীতির বিরোধী। এই আইনের মাধ্যমে 'বৈষম্য' সৃষ্টি করা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে।প্রশ্ন ওঠে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের মতো দেশগুলি আগত শরণার্থীদের কথা কেন উল্লেখ করা হল না আইনে।