Matua Community : মতুয়া কারা, কোন কোন কেন্দ্রে প্রভাব? CAA ফল ভোটে? খোঁজ নিল এই সময় ডিজিটাল
এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৪
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA চালু হওয়ার পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে মতুয়া সম্প্রদায়। বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। একাধিক লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর হারা-জেতা নির্ধারণ করেন তাঁরাই। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই সিএএ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফসল। এই একটি আইন কি পাল্টে দেবে একাধিক প্রার্থীর ভবিষ্যত?
কারা এই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ?
সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ সম্প্রদায় হল মতুয়া। মতুয়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল - মাতোয়ারা বা মেতে থাকা। হরিচাঁদ ঠাকুর প্রেমভক্তিরূপ ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই মতুয়াবাদ প্রবর্তন করেন। লাখ লাখ মানুষ এরপর থেকেই এই মতুয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁদের ভাবধারা এবং ভক্তিকে ধারণ করে চলেছেন। মতুয়া সাধনের মাধ্যমেই ঈশ্বর লাভ তাঁদের মূল দর্শন। মূলত, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতাই বহু নিম্ন বর্ণের মানুষকে আকৃষ্ট করে।নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়
কী ভাবে শুরু মতুয়াদের আন্দোলন?
মূলত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু করা হয়। আন্দোলনের রূপকার ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তাঁর পরবর্তী যুগে পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর, ব্যারিস্টার পি আর ঠাকুর সেই আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করেন। দুই বাংলার নমঃশূদ্র এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে একত্রিত করে শুরু হয় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলন। যদিও তাঁদের এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি গোটা দেশ জুড়েই রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে এই আন্দোলনের সঙ্গে বাংলার রাজনীতিও সম্পূর্ণ ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালের পর লাখ লাখ মানুষ বাংলাদেশ থেকে এই দেশে আসেন। তারপর থেকেই উদ্বাস্তু সমস্যা এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিতে শুরু হয় তাঁদের আন্দোলন।
আন্দোলনে মতুয়ারা
কোন জেলায় প্রভাব বেশি?
বর্তমানে বাংলার একাধিক জেলায় রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। মূলত, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান জেলার কিছু অংশে এর বসবাস রয়েছে। বিধানসভা ভিত্তিক এলাকা ধরলে রাজ্যের প্রায় ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। লোকসভা আসনের ভিত্তিতে বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুর, নদিয়া জেলার রানাঘাট, কৃষ্ণনগর সহ একাধিক কেন্দ্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন।
বড়মা বীণাপানি ঠাকুরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী
কে কী বলছেন?
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘ ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) বাস্তবায়নের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটি প্রমাণ করে মোদী কি গ্যারান্টি। সমগ্র মতুয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এবং হরিচাঁদ ঠাকুর জি ও গুরুচাঁদ ঠাকুরজির ভক্তদের তরফ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘বঞ্চিত মতুয়ারা আজ তাঁদের অধিকার পেয়েছেন। আজ তাই উৎসব পালনের সময় এসেছে।’ অন্যদিকে, মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চেয়েছি। যদি সেটা না হয়, তাহলে আমরা ফের আন্দোলনে নামব।’ সর্বোপরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলে জানিয়েছেন। বাংলায় সিএএ কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
‘বঞ্চিত মতুয়ারা আজ তাঁদের অধিকার পেয়েছেন। আজ তাই উৎসব পালনের সময় এসেছে।’কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর
ভোটে কী প্রভাব?
নাগরিকত্ব সহ একাধিক দাবিতে মতুয়ারা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। রাজ্যে পালাবদলের আগে ২০১০ সালে মতুয়া সংঘের সদস্যরা কলকাতায় একটি বিরাট সমাবেশ করেন। এই সমাবেশের পর থেকে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের সখ্যতা তৈরি হয়। এমনকি, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বীণাপাণি ঠাকুরের ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, উপেন বিশ্বাস, রমেশ বিশ্বাসের মতো উদ্বাস্তু নেতাদের প্রার্থী করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও আসরে নামে। বীণাপাণি দেবীর মৃত্যুর পর থেকে ধীরে ধীরে দ্বিধাবিভক্ত হতে শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায় এবং সর্বোপরি ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া বাড়ির সদস্য শান্তনু ঠাকুর বিজেপির হয়ে দাঁড়ান। একাধিক বিধানসভা আসনেও বিজেপির প্রভাব বাড়তে থাকে। এবার সিএএ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বদলে যাবে সমস্ত সমীকরণ?